পঞ্চগড়ে বাড়ছে বাল্য বিবাহ


পঞ্চগড়ের সদরে আশংকাজনক হারে বেড়েছে বাল্য বিবাহ। এক শ্রেণীর মুনাফা লোভী নোটারী পাবলিকের সহযোগিতা নিয়ে আর নিকাহ রেজিষ্টার কাজিদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা হচ্ছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করার মুল হোতা হল কাজি আব্দুল মতিন সরকার। তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১০নং গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্টার । তার বাড়ি ১০নং গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের তাঁত পাড়ায়। সে মৃত মজিদ সরকারের পুত্র ।
সে সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গাগুলি দেখিয়ে দেদারছে নিজে ও কয়েকজন সহকারী দিয়ে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করাচ্ছেন। এদিকে কাজী আঃমতিন জেলা রেজিস্টার কে না জানিয়ে সহকারী নিকাহ রেজিষ্টার ওই ইউনিয়নের জন্য তিনি বেশ কয়েকজন কে নিয়োগ দিয়েছেন আবার তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন নকল ভলিয়ম খাতা এলাকাবাশী জানাযায়।
রংপুর জেলায় তার আদি নিবাস থাকলেও শুন্য হাতে আসেন পঞ্চগড়ে। পঞ্চগড় এসে কৌশলে ১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারীতে পঞ্চগড় সদর উপজেলা ১০নং গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুল মতিন সরকার নিয়োগের পর থেকেই শুরু করেন বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন। বাড়তি টাকা নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। একাধিক জায়গায় জমি কিনেছে, বাড়ি করেছেন।
গোয়ালপাড়া বাজারে রয়েছে সো-মিল আর মার্কেট। সেখানে রয়েছে ১২টি দোকান, প্রায় ৭০/৭৫ বিঘা জমি কিনেছেন। পঞ্চগড় পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের পাশে করতেছেন ৫তলা ফ্লাট বাড়ি। তারপাশে রয়েছে ১০ শতক জমি এবং ধাক্কামাড়া বি,এম,কলেজের পাশে আরও একটি টিনসেট বাড়ি।
এতো সব কিছুর অবদান বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করে বাড়তি ফি আদায় করে। কাউকে তোয়াক্কাই করেন না তিনি। রেখেছেন সহকারী। যেটার কোন নিয়ম নাই। মতিন সরকার আটোয়ারী উপজেলার লক্ষীপুর দাখিল মাদরাসার সুপার হিসেবে কর্মরত আছেন। সেখানেও তিনি দায়িত্বে অবহেলা করেন। বেশির ভাগ সময় তিনি মাদরাসায় উপস্থিত থাকেন না। ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত নিয়মিত ছাত্রীদের ও জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের স্কুল ছাত্রীদের বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করছেন ও করাচ্ছেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের মোল্লাহপাড়া এলাকার মৃত শরিফুল ইসলামের মেয়ে সুমনা আক্তার সানুর বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেনমোহর করা হয়। বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন বাবদ নিয়েছেন ৭ হাজার টাকা। এতে সহায়তা করেছেন সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ ও ১০নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল-তামাস হোসাইন লেলীন, যৌতুক লেনদেন করা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সানু মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের নাতনি।
সানু গড়িনাবাড়ি ইউনিয়নের ভাটাপুকুরি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্রী। একই বিদ্যালয় থেকে ২০১৯ সালে সে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২.৪৩ ফলাফল পেয়েছেন। তার জম্ম তারিখ ৩ জানুয়ারী ২০০৬। জেএসসি সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৪ বছর ৮ মাস। গত বছরও ঐ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনির কয়েকজন ছাত্রীর বিয়ে হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র জানান, সুমনা আক্তার সানু আমাদের বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির নিয়মিত ছাত্রী। শুনেছি তার নাকি বিয়ে হয়েছে। নিয়মিত ছাত্রীদের যদি এভাবে বিয়ে হয়ে যায় তাহলে আমরা কি করবো ।
গড়িনাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল জানান, মেয়ের দাদাও মুক্তিযোদ্ধা আর আমিও মুক্তিযোদ্ধা। গলেহা কান্তমোনীর আখিমুল ইসলামের পুত্র মিজানুর রহমানের সাথে মেয়েটার একটু গোন্ডগোল হয়েছে। তাই ঝামেলা যাতে না হয় এজন্য আমার বাড়িতেই কাজিকে ডেকে এনে বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, অভিভাবকরা কেন তাদের অপ্রাপ্ত মেয়েদের বিয়ে দেন বিষয়টি আমাদের বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়না কেন। বাল্য বিয়ে বন্ধ করার দায়িত্ব হল জেলা রেজিস্ট্রারের। অথচ তিনি তার দায়িত্ব এড়িয়ে জান ।
এব্যাপারে পঞ্চগড় জেলার জেলা রেজিস্ট্রার মীর মাহবুব মেহেদীর সাথে কথা বললে তিনি তার দায়িত্ব এড়িয়ে গিয়ে বলেন আমি পঞ্চগড় সদর সাব রেজিস্ট্রারকে কাজিদের দেখাশোনা ও তদারকি করার দায়িত্ব দিয়েছি। তারপরেও কাজিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবো।
সদর সাব রেজিস্ট্রার আ- ন -ম - বজলুর রশীদ অফিসে না থাকার কারণে তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, কাজিরা আমার আওতায় না থাকার কারনে আমি ব্যবস্থা নিতে পারবো না। আপনারা জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ করেন। তিনিই কাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
অভিযুক্ত কাজি আব্দুল মতিনের বাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহিত মোবাইলে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
পঞ্চগড় জেলা নিকাহ রেজিস্টার সমিতির সভাপতি মাঃআব্দুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান,প্রশাসন থেকে আমাদেরকে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আমরা কাজি আব্দুল মতিনকে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারপরও সে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করাচ্ছে।
১০নং গড়িনাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলতামাস হোসাইন লেলিন জানান, বাল্য বিয়ের বিষয়টি আমি জানি।