ভূঞাপুরে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে

মিটার প্রতি ৩০০ থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা দিতে হয় নির্বাহী প্রকৌশলীকে

মামুন সরকার, ভূঞাপুর
প্রকাশিত: ০৯:৪২ পিএম, শনিবার, ১ জুন ২০১৯ | ৭৩০

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা একটি শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা। প্রধানমন্ত্রী তিন বছর আগেই এ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করেছেন। যা ভূঞাপুর তথা টাঙ্গাইলবাসীর জন্যের গর্বের। কিন্তু বিদ্যুৎ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার অনিয়ম আর দূর্নীতির কারণে আজ কলুষিত হচ্ছে শতভাগ বিদ্যুতায়ন।

যা সরকারের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করছে। ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিসের নানা ভোগান্তির কারণে আজ গ্রাহকদের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা।

ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নতুন সংযোগের নামে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, কাজ না করেই মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাতৎ এবং নতুন সংযোগের জন্য মিটার প্রতি কিলো অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে লক্ষাধিক টাকারও বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ এখন প্রকাশ্য।

নতুন সংযোগের জন্য মিটারসহ ৫০০ টাকা ব্যাংক ড্রাফট দেয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকদের কাছ আদায় করা হচ্ছে সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা থেকে ২৫০০টাকা। যার মধ্যে মিটার প্রতি ৩০০ টাকা করে জমা পড়ছে নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের ফান্ডে। আর বাকি টাকা বন্টন হচ্ছে অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে। শুধু তাই নয় কিলো ভেদে বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরির সংযোগ দিতে এর পরিমান গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৩০ হাজার থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা পর্যন্ত।

বিশেষ করে শিল্প কারখানা, গভীর নলকুপ বা রাইস মিলে থ্রি ফেইজের লাইন নিতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে এর চেয়ে অনেক বেশি। যা ভূঞাপুরের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকলেই অবগত।

এছাড়াও সরকারিভাবে নতুন সংযোগের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকলেও বিভিন্ন এলাকায় নতুন সংযোগ পেতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গ্রাহকদের মাঝে প্রচলন আছে মোটা অঙ্কের টাকা ছাড়া কোন বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায়না।

২০১৭- ২০১৮ অর্থ বছরে গোবিন্দাসী তোতা মাস্টারের মোড় হতে গোবিন্দাসী মধ্যপাড়া পর্যন্ত নতুন লাইন নিতে ওই এলাকার গ্রাহক আব্দুল্লা মাস্টারকে গুনতে হয়েছে ২লাখ ১০হাজার টাকা। যা অফিসের এক কর্মচারীর মাধ্যমে চলে যায় নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের হাতে। একই অর্থ বছরে চর অলোয়া থেকে গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যদুরগাতী পর্যন্ত ট্রান্সফর্মারসহ নতুন লাইন নিতে ওই এলাকার গ্রাহকদের গুনতে হয়েছে ৭লাখ ৮০হাজার টাকা। যা ঠিকাদার আব্দুর রহিম ও প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়। কিছুদিন আগে নলুয়া থেকে নিকরাইল রশিদের মিল পর্যন্ত ১১টি খুঁটি দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। এ সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ অফিস হাতিয়ে নিয়েছে ৭লাখ টাকা। এ রকম উপজেলার ফলদা, পাঁচটিকরি, অলোয়া সিংগুরিয়াসহ প্রত্যেক এলাকাতেই নতুন লাইন নিতে লাখ লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের।

গোবিন্দাসী গ্রামের আবদুল্লা মাস্টার বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে ঝামেলায় ছিলাম। টাকা লেগেছে তবু লাইন যে পেয়েছি এটাই সৌভাগ্যর।
যদুগাতী গ্রামের খন্দকার বেলাল হোসেন বলেন, আমরা মেইন গোবিন্দাসীর লোকজন। তারপরও আমরা বিভন্ন জায়গায় ধর্ণা দিয়েছি। কোন কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত ৭ লাখ ৮০হাজার টাকার বিনিময়ে লাইনটি পেয়েছি। এতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে। শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত উপজেলায় এমন অনিয়ম সত্যিই অবাক করার মতো।

এদিকে প্রতি মাসে লাইন সংস্কার ও গাছ কাটা বাবদ বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও আকাশে মেঘ জমলেই লাইনে সমস্যার অজুহাতে বন্ধ করে দেয়া হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। রমজান চলমান। গতো কয়েকদিন ধরেই সেহেরির সময় মিলছেনা বিদ্যুৎ। মোমবাতি আর চার্জার লাইটের আলোতেই সারতে হচ্ছে সেহরি খাওয়া। প্রচন্ড গরমে ব্যাপক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে রোজাদারদের।

রাউৎবাড়ি গ্রামের আরিফুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন পর পরই হাজার হাজার টাকা খরচ করে লাইন সংস্কার, গাছ কাটার জন্য বিদ্যুৎ সারাদিনব্যাপী বন্ধ রাখা হয়। তারপরও আকাশে একটুখানি মেঘ জমলেই বিদ্যুৎ লাপাত্তা। সেহেরিতে গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ ছাড়াই সেহেরি খেতে হচ্ছে। একই অভিযোগ গোবিন্দাসী গ্রামের ফরিদুল ইসলাম বাবুরও।

তিনি বলেন, এটা নতুন না আকাশে মেঘ জমলে আমরা ধরেই নেই আজ আর বিদ্যুৎ পাবোনা। গত কয়েকদিন ধরে সেহেরিতে মোমবাতি জ্বালিয়েই খাবার খেতে হচ্ছে।

সরকারি সব আইনকানুনকে উপেক্ষা করে শতভাগ বিদ্যুতায়িত এ উপজেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাকের এমন অনিয়ম ও দূর্নীতি প্রকাশ্যে রুপ নিলেও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না। যা সরকারের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুন্ন করছে। আবদুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলায় কাজ করছেন বলে তার এ অনিয়ম ও দূর্নীতির মাত্রা অনেকাংশে বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের লোকজন।

বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ব্যাংক ড্রাফট ৫০০ টাকা। আনুষাঙ্গিক খরচের কারণে টাকা বেশি নেয়া হয়। তবে খরচটা কি তা তিনি খোলাসা করে কিছু বলেননি। এছাড়াও লাইন নেয়ার জন্য যে মোটা অঙ্কের টাকা লাগে সে বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ টাকা দিয়ে লাইন নেয়ার জন্য এতো অস্থির হয় কেন? আস্তে আস্তে লাইন এমনিতেই হয়ে যাবে। আমরা কাউকে টাকা দেয়ার জন্য বলে দেই? এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

এদিকে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা দুনীতিবাজ এ কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে সরকারের শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন যেন কলুষিত না হয় সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।