ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল সল্ট-গ্লোবাল সল্ট ও সোডিয়াম সালফেটের সয়লাভে 

দেশে দর-পতনে কক্সবাজারে লবণ চাষীরা চরম ভোগান্তিতে

এম, জুনাইদ উদ্দিন(চকরিয়া) কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ | ২০০

কক্সবাজার ৮ উপজেলা ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলাসহ প্রায় ৪৮ হাজার একর জমির উপর লবণ চাষ হয় প্রতি বছর। গেল বছরের তুলনায় এ বছরই দর-পতনে কক্সবাজারের লবণ চাষীরা চরম ভোগান্তিতে। এছাড়া স্থানীয় লবণ ক্রেতারা চাষীদের কাছ থেকে ৪৪ কেজিতে মণ হিসেবে লবণ নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে লবণ ক্ষেতের রুদ্রে পোড়ানো চাষীরা। 

পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের সাবেক এম ইউ পি নুরুল আবছার উক্ত প্রতিবেদক ”কে জানান, আমাদের আয়ের উৎস হল লবণ আর চিংড়ি ঘের। গেল বছরের তুলনায় এ বছর লবণের দাম শুরু থেকেই ২শ টাকার নিচে হওয়াতে আমরা লবণ ক্ষেত চাষীরা চরম ভোগান্তিতে আছি।

এছাড়া স্থানীয় লবণ ক্রেতারা (দালাল) চাষীদের কাছ থেকে ৪৪ কেজিতে মণ হিসেবে লবণ ক্রয় করছে, এতেও ভোগান্তির শেষ নেই। ক্রেতাদের সাথে চাষীরা প্রতিবাদ করলে তাহার উৎপাদিত লবণও পরবর্তিতে ক্রয় করছে না। ফলে লবণ চাষীরা এখন উপায়হীন হয়ে পড়েছে। 

সর জমিনে, খোঁজ নিলে জানা যায়, গেল বছরের তুলনায় এ বছর লবণের মাঠ বরগা হিসেবে লাগিয়ত হয় ২৪-২৭ হাজার টাকা করে, তাও ৪০ শতকের নির্দিষ্ট জমি। প্রতি ৪০ শতকে লবণ চাষের শুষ্ক এক মৌসুমে লবণ প্রায় ২০০ মণ। এতে করে বরগা চাষীরা লবণ মাঠের বরগার দাম, মাসিক শ্রমিকের বেতন সহ পলিথিনের দাম মিলিয়ে সর্বোপরি প্রত্যেক চাষীরা এবছরই লবণের দামের দর-পতনে চরম ভোগান্তিতে থাকবে। এতে করে ৬৮ হাজার একর জমির উপর চাষকৃত লবণ চাষীদের সারা বছরের আয় রোজগারের অন্তহীন ঘাটতি থাকবে বলে দুশ্চিন্তার কবলে তাদের দিনাতিপাত অতিবাহিত হচ্ছে।

এতে তাদের এ দুশ্চিন্তার ও দর-পতনের সংকট নিরসনের অবিভাবক হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রীর আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

লবণের দর-পতনের বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলার ১নং ইসলামপুর লবণ শিল্প মিল মালিক সমিতির সভাপতি শামশুল আলম আজাদের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লবণের দর-পতনের মূল কারণ হচ্ছে দেশের বড় বড় লবণ শিল্প কারখানার মালিকেরা সোডিয়াম সালফেট লবণ প্রয়োজনের তুলনায় আরো ৬০গুন বেশি ক্রয় করে রেখেছে।

আমাদের দেশে ১ বছরে এ বৈদেশিক সোডিয়াম সালফেট লবণ প্রয়োজন ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু এ মালিকে রা চাহিদার ৬০গুন বেশি লবণ আমদানী করায় আমাদের দেশীয় উৎপাদিত লবণের চাহিদা এসব কারখানাতে হ্রাস পায় বলেই আমরা লবণ নিয়ে চরম ভোগান্তিতে ভোগছি। তেমনিভাবে আমাদের চাষীরাও লবণের দাম নিয়ে  কষ্ট পাচ্ছে। এ বিষয়ে কক্সবাজারের ৪জন এমপির সাথে পৃথক পৃথক আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রেরণ করব। এছাড়া সংকটের সমাধান একমাত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ব্যতিত নিরসন হবে না।

চট্টগ্রাম শিল্প লবণ মিল কারখানার মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ কবির আহমদের সাথে মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমাদের দেশে বড় বড় লবণ শিল্প কারখানার মালিকেরা বৈদেশিক উৎপাদিত লবণ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ক্রয় করে দেশের শিল্প কারখানা ভরাট করে রেখেছে বলেই দেশেরে উৎপাদিত লবণের চাহিদা হ্রাস পায়।

এছাড়া এ শিল্প মালিকেরা ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল সল্ট, গ্লোবাল সল্ট ও সোডিয়াম সালফেট লবণ আমদানী চলমান রাখায় দেশের উৎপাদিত লবণের দর-পতনের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বৈদেশিক লবণের আমদানী সয়লাভে, দেশীয় লবণের আমদানী হ্রাস, বৃদ্ধি সহ দর-পতন হয়ে চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

এছাড়া স্থানীয় লবণ ক্রেতারা এখন কত কেজি তে মণ হিসেবে লবণ ক্রয় করছে সেই দিকে আমাদের দৃষ্টি নহে। আমরা চাই লবণের চাহিদা বৃদ্ধি ও গেল বছরের ন্যায় স্বাভাবিক শিথীলযোগ্য লবণে ন্যায্য দাম, অন্যথায় চাষীরা সহ স্থানীয় ছোট-খাট লবণ ব্যবসায়ীরা না খেয়েই মরবে। তাই আমি শিল্প মন্ত্রণালয়ের জন্য আমার চট্টগ্রাম লবণ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি প্রেরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। যেভাবেই হোক এ সংকট নিরসনের জন্য মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী ও প্রধান মন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।