দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, বুধবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮ | ১৯২

রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফটকের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান।  রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অধ্যক্ষের বরখাস্তসহ ছয়টি দাবি মেনে নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা।

অধ্যক্ষসহ তিন শিক্ষককে বরখাস্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর বেলা পৌনে দুইটার দিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসে।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে আনুশকা রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শুনেছি, আমাদের কিছু দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের অধ্যক্ষ বা মুখপাত্রের পক্ষ থেকে এ –সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা চাই। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের অবস্থান চলতে থাকব।’

শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির মধ্যে রয়েছে অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌসকে বরখাস্ত এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার কারণে ৩০৫ ধারায় শাস্তি; কোনো শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হবে না—এমন নিশ্চয়তা দেওয়া; কথায় কথায় শিক্ষার্থীদের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দেওয়া ও দেওয়ার হুমকি না দেওয়া; শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতার জন্য প্রত্যেক ক্লাসে মনোবিদের ব্যবস্থা রাখা; গভর্নিং বডির প্রত্যেক সদস্যের পদত্যাগ এবং আন্দোলনকারী কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া।

গতকালের মতো আজও সকাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেইলি রোডের শাখার প্রধান ফটকে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েক শ শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে যোগ দেন অনেক অভিভাবক।

অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শাখাপ্রধান এবং এক শ্রেণিশিক্ষককে চিহ্নিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটি। এ জন্য ওই তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে কমিটি।

আজ বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ওই তিন শিক্ষককে বরখাস্ত করতে পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়ের কমিটি। এই তিন শিক্ষকের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।

এই তিন শিক্ষক হলেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনা।

গতকাল মঙ্গলবার মেয়েকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ এই তিনজনকে আসামি করে পল্টন থানায় মামলা করেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী।

দিলীপ অধিকারীর অভিযোগ, রোববার পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে, এমন অভিযোগে অরিত্রীকে সোমবার তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সোমবার স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাঁদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে দেওয়া ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়। পরে বাসায় গিয়ে তিনি দেখেন, অরিত্রী তার কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়নায় ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলছে।

অরিত্রীদের শান্তিনগরের বাসা থেকে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে চিকিৎসকেরা অরিত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন।