ঝুলে আছে সেতুর কাজ, দুর্ভোগে হাজারও মানুষ

হাসেম আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:২৪ এএম, রোববার, ৭ অক্টোবর ২০১৮ | ৫৭১
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে সেতু নির্মাণের ৫ মাস অতিবাহিত হলেও দুপার্শ্বে মাটি ভরাট না করার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৫০টি গ্রামের ২০ হাজার মানুষ।
 
জেলার ঐতিহ্যবাহী হাট লাহিড়ী বাজারে আসতে মরণফাঁদ অতিক্রম করতে হচ্ছে উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের পারদেশীপাড়া, ভোটপাড়া, ঝাড়গাও, খেকিডাঙ্গা, গুঞ্জরা হাট, আখানগর, পাতিলাভাসা সহ আশপাশের প্রায় ৫০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে। সেতু পারাপার হওয়ার সময় ইতিমধ্যে দুজনের হাত ও একজনের পা ভেঙ্গেও গেছে। 
 
স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের বন্যায় ধ্বসে যায় এখানকার সেতুটি । এরপর ঐহিত্যবাহী লাহিড়ী হাটে যাতায়াতে চরম অসুবিধায় পড়তে হয় । বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের পারদেশীপাড়া, ভোটপাড়া, ঝাড়গাও, খেকিডাঙ্গা, গুঞ্জরা হাট, আখানগর, পাতিলাভাসা সহ আশপাশের প্রায় ৫০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের লাহিড়ী হাট আসার জন্য দীর্ঘদিনের চাওয়া পাওয়া ছিল ভোটপাড়া গ্রামের রাস্তায় একটি সেতু। 
 
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গেল বছর প্রায় ২ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ভোটপাড়া দিয়ে লাহিড়ী যাওয়ার রাস্তায় একটি আরসিসি সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
 
রামবাবু কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করে। ব্রীজ নির্মাণের পর সেতুর দুপার্শ্বের রাস্তায় মাটি ভরাট না করা এবং চলাচলের জন্য বিকল্প কোন রাস্তা না থাকার কারণে সেতু পারাপার হওয়ার জন্য পশ্চিম পার্শ্বে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সিঁড়ি তৈরী করে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। 
 
সেই বাঁশের সিঁড়ি বেয়ে প্রতিদিন স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন পেশার প্রায় ৪-৫ হাজার মানুষ মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাইকেল কাধে নিয়ে পারাপার হচ্ছে। গত ৭ দিনে দুজনের হাত ও একজনের পা ভেঙ্গেছে বলে জানা গেছে। 
 
ব্রীজ দিয়ে সাইকেল কাধে নিয়ে পার হওয়ার সময় ভাত ভেঙ্গে যাওয়া পতিলাভাসা গ্রামের সমশের আলী জানান, একটুর জন্য প্রাণে বেচে গেছি। এর আগেও দুদিন পড়ে গিয়েছিলাম। ঔষধপত্র সব মিলিয়ে ১০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেছেন দুমাস। 
 
ছাগল ব্যবসায়ী আখানগর গ্রামের মকবুল হোসেন বাইসাইকেল কাধে নিয়ে পার হবার সময় দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, ২০১৩ সালে বন্যায় রাস্তা ভেঙ্গে যায়। এরপর সেতু না থাকায় দু-চারদিন পানিতে কাপড় ভিজে গেলেও তেমন কোনো সমস্যা হতো। এখন সেতু নির্মাণের পর কাধে বাইসাইকেল নিয়ে মরণফাঁদ পার হচ্ছি এমনটা মনে হচ্ছে। 
 
আশার আলো কিন্ডার গার্টেনে পড়ুয়া ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী রতন চন্দ্র বলেন, ৫-৬ জন বন্ধু ছাড়া আমরা সেতুটির সিড়ি দিয়ে সাইকেল পারাপার করতে পারি না। সরকারের কাছে বিনীত নিবেদন সেতুটির দুপাশে যেন দ্রুত মাটি ভরাট করে দিয়ে আমাদের স্কুলে যাতায়াত সুবিধা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা করে দেন। 
 
ওই এলাকার আওয়ামীলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবুল কাসেম জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে এলাকায় উন্নয়ন হচ্ছে ব্যাপক হারে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম, অবহেলা এবং সরকারী কর্মকর্তাদের উদাসীনতা বর্তমান সরকারের উন্নয়নকে ম্লান করছে। 
 
চাড়োল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলিপ কুমার চ্যাটার্জী মুঠোফোনে বলেন, গত কয়েকমাস ধরে স্থানীয় লোকজন পরিষদে এসে দুর্ভোগের কথা বলেছে। আমি নিজেও সেতুটির অবস্থায় দেখেছি। বিষয়টি সমাধানের জন্য উপজেলা প্রকৌশলী একাধিকবার অবগত করার পরেও জানিনা কি কারণে মাটি ভরাট কাজটি হচ্ছে না। আপনারা একটু বিষয়টি দেখেন ভাই বলে অনুরোধ করেন তিনি। 
 
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই ইউয়িনের এক ইউপি সদস্য বলেন, মাটি ভরাট কাজের টাকা নিয়ে স্থানীয় প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও স্থানীয় ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিলে সেতুটির দুপার্শ্বে মাটি ভরাট কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি মীমাংসা এখনও হয়নি তাই মাটি ভরাট কাজ বন্ধ। 
 
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রকৌশলী মাইনুল ইসলাম বলেন, সেতুটির দুপার্শ্বে মাটি ভরাট কাজটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী রামবাবু স্থানীয় এক ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। একপার্শ্বে একটু মাটি ভরাট করার পর কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। আমি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব শ্রীঘ্রই এলাকার মানুষের দুর্ভোগের দিন শেষ হবে।