সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে: তারেক রহমান

বাসস
প্রকাশিত: ১০:০২ পিএম, রোববার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ৪৫

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিএনপিকে এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। আজ রোববার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন অব বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ছাত্রদলের অংশগ্রহণে বিএনপি’র ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচিতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেছেন, সামনের সময়গুলো খুব ভালো নয়। কঠিন সময় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে অনেকবার বলেছি, সামনে অনেক কঠিন সময় আসবে। বিভিন্ন ষড়যন্ত্র হবে। গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ কঠিন হবে। এখন নিশ্চয়ই আপনারা আমার কথার সত্যতা পাচ্ছেন। তবে সবাই ঐক্য ধরে রাখুন। জনগণকে সঙ্গে নিয়েই বিএনপি সমস্ত ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সব ষড়যন্ত্র রুখে দেবার অন্যতম উপায় হলো গণতন্ত্র। আমরা যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তবে অনেক ষড়যন্ত্র রুখে দেয়া সম্ভব। তারপরও সামনে অনেক বাধা, অনেক কঠিন সময় আসবে। কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রে অরাজকতা বিরাজ করছে। বিএনপি সারা জীবন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে গেছে। আগামীতেও সমস্ত ষড়যন্ত্র পাশ কাটিয়ে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।

তারেক রহমান শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের বড় নেতারা আওয়ামী লীগের সুরেই বিএনপির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। অথচ এ রাজনৈতিক দলের দুজন সদস্য এক সময় তাদের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে ছিলেন। কারণ তাদের আত্মবিশ্বাস ছিল বেগম খালেদা জিয়া সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। যে রাজনৈতিক দলটি বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের কথাবার্তা, কর্মকাণ্ডের ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, কোনো কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী নির্বাচনকে সামনে রেখে বলছে, আগে অমুককে দেখলাম-তমুককে দেখলাম, এবার তাদেরকে দেখেন। যাদের দেখার কথা বলা হচ্ছে- তাদের দেশের মানুষ একাত্তর সালেই দেখেছে। একাত্তর সালে তারা তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে, ঠিক যেভাবে পতিত স্বৈরাচারকে দেখেছিল দেশের মানুষ। একাত্তরে তারা শুধু হত্যাই করেনি, তাদের সহকর্মীরা মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল, কথাটি মনে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, এখন তারাই আবার বিভিন্ন জিনিসের কনফরমেশন দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু যে জিনিসের মালিক আমি না সেই জিনিস দেয়ার কমিটমেন্ট আমি কীভাবে দেই? একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করি, এ পৃথিবীর বাইরে ও ভেতর সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ একমাত্র আল্লাহর হাতে। একজন মানুষ জান্নাতে যাবে কিনা সেটা নির্ধারণ করবেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এটা যদি আমি নির্ধারণ করতে যাই তাহলে তো সেটা ওপরওয়ালার সঙ্গে পাল্লা দেয়ার সমান। এটা এক ধরনের শিরক। এসব নিয়ে যারা কথা বলে তারা শিরক করছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের দায়িত্ব হবে একথা জনগণের কাছে গিয়ে তাদের বোঝানো।

দেশ গড়াই এ মুহূর্তে বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কথা অনেক হয়েছে। এখন লক্ষ্য একটাই, দেশকে গড়তে হবে। জিয়াউর রহমান দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশকে খাদ্য রফতানির দেশে পরিণত করেছিলেন। এরপরে দুর্নীতি নিমজ্জিত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দেশকে বেগম খালেদা জিয়া ওপরে উঠিয়ে এনেছিলেন।

তিনি বলেন, গত দেড় বছর অনেক আলাপ হয়েছে। অনেক সংস্কার আলাপ হয়েছে। যেগুলো সংস্কার নিয়ে আলাপ হয়েছে, সেখানে বিএনপির অনেক আলাপ করেছে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন। মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হলে দেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশ গড়ার কর্মসূচি নিয়ে দলের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেতে হবে। বিএনপির কাছে মানুষের প্রত্যাশা কি তা জানতে হবে, বুঝতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে দেশের কৃষক, শিক্ষক, ইমাম, নারী-শিশুসহ দেশের মানুষের কল্যাণে বিএনপির কি করতে চায়, সেই পরিকল্পনার কথা তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। গণতন্ত্রের পক্ষে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। দেশ গড়ার পরিকল্পনা সফল করতে গেলে তরুণদের সামনে অনেক বাধা আসবে, তবে এদেশের মানুষকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে দেশ যখন সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছে, তখন বিএনপি ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি করেছে। আগামীতেও বাংলাদেশে একমাত্র বিএনপিই দুর্নীতির লাগাম টানতে পারবে। দুর্নীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে সব উন্নয়ন পরিস্থিতি পিছিয়ে যাবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে ও আরেক যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খানসহ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।