এক বিঘা জমির ধানের চারা ৫ হাজার টাকা

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৬৭৩

জমি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও উত্তরের বানভাসি কৃষকেরা এখন ভুগছেন ধানের চারা সংকটে। গ্রাম-গঞ্জের হাট-বাজারে যে চারা পাওয়া যাচ্ছে তার দামও অত্যধিক। বর্তমানে এক বিঘা জমির জন্য চারা বাবদ কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে।

যেখানে আমন রোপণের শুরুতে এক বিঘা জমির চারা কিনতে লেগেছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকার মতো। জানা গেছে, এবার অধিকাংশ আমনের বীজতলা বন্যায় ডুবে যাওয়ার কারণে, বিশেষ করে বগুড়া ও নওগাঁ এলাকায় চরম চারা সংকট চলছে।

আমনের চারা নিয়ে কথা হয় বগুড়ার ধুনট উপজেলার চরপাড়া গ্রামের কৃষক আকিমুদ্দিন শেখের সঙ্গে। তিনি জানান, বন্যার কারণে আগের চারা ডুবে গেছে। এখন নতুন করে চারা তৈরি করতে যে সময় লাগবে তাতে আমন ধান রোপণের মতো সময় থাকবে না।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে হাট-বাজারে যে ধানের চারা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, সেটা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এ কারণে চারার দামও বেশি। যে চারা বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে, সে সময় এক বিঘা জামিতে চারা রোপণ করতে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা লাগত। এখন একই পরিমাণ জমিতে চারা রোপণে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।

 একই উপজেলার উল­াপাড়া গ্রামের খন্দকার পাড়া গ্রামের শামসুল খাঁর ছেলে হেলাল বলেন, জমি থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। ধানের যে দাম তাতে ধান লাগাতে পারলে লাভবান হতে পারতাম। কিন্তু বিছনের (চারা) যে দাম তাতে ধান আর আবাদ করা সম্ভব না। তিনি জানান, ধানের জমিতে এখন সরিষা বুনবেন। কারণ আগাম সরিষা করলে সরিষা তুলে ইরির আবাদ করতে পারবেন। এদিকে, উরাঞ্চলের বন্যাকবলিত বিভিন্ন জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধানের চারা ও বীজ দিয়ে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলেও তা তুলনামূলকভাবে খুব কম।

প্রতিটি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা লাখ লাখ। অথচ সরকারের তালিকা অনুযায়ী প্রতি জেলায় মাত্র দুই থেকে তিন হাজার কৃষক বীজ ও চারার সুবিধা পাচ্ছেন। নওগাঁ সদর উপজেলার গাংজোয়ার গ্রামের বর্গা চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, বর্গা নিয়ে তিন বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। বন্যায় সব জমি তলিয়ে, ফসল নষ্ট হয়ে পঁচে গেছে। বাজারে ধানের চারা দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পোন (৮০ আটি)। যেখানে খাবারের সমস্যা, সেখানে এত টাকা দিয়ে ধানের চারা কেনা সম্ভব না।

বর্গা চাষি বলে কৃষি কার্ড না থাকায় সরকারি কোনো সহযোগিতাও পাচ্ছি না। অপর কৃষক আব্দুস সালাম বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগ থেকে কিছু ধানের চারা পেয়েছিলাম। তা দিয়ে চার কাঠা জমিতে নতুন করে রোপণ করলাম। বীজের অভাবে এখনও তিন বিঘা জমি অনাবাদী ফেলে রাখতে হয়েছে। বাজারে ধানের চারা যেটুকু আছে, উচ্চমূল্য হওয়ায় কেনা সম্ভব না।

সমাজসেবী তাসলিমা ফেরদৌস বলেন, বন্যায় চারিদিকে সবকিছুই প্লাবিত। বানভাসিরা যেখানে খেতে পাচ্ছেন না, সেখানে ফসলের উপকরণ কেনা তাদের পক্ষে অসম্ভব। এমন ধারণা থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের ক্ষুদ্র চেষ্টায় কৃষকদের মধ্যে ধানের চারা ও শাক-সবজির বীজ বিতরণ করেছি। যাতে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি ও সাহস পায়। আমাদের দেখাদেখি যেন অন্যরা সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মনোজিত কুমার মলি­ক বলেন, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি যেন কৃষক পুষিয়ে নিতে পারেন, এজন্য কৃষি অফিসের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রণোদনার মাধ্যমে চারটি ফসল ভুট্টা, সরিষা, মুগ ও গুটি বেগুনের বরাদ্দ আসছে। পুনর্বাসন বা প্রণোদনা কমিটির মাধ্যমে বিভাজন করে যে উপজেলায় এবং যেসব কৃষক প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হবে।