মির্জাপুরে বিদ্যালয়ের বেহাত জমি উদ্ধারে কমিটি গঠন

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, শুক্রবার, ২৯ জুন ২০১৮ | ২০১

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫৯ শতক বেহাত জমি উদ্ধারে একটি কমিটি গঠন করেছে।বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের এক সভার মাধ্যমে জমি উদ্ধারের জন্য ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ভাওড়া ও পাইখার গ্রামের কয়েকজন শিক্ষানুরাগী নিজস্ব জমি দানের মাধ্যমে ভাওড়া উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার করেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৬৯ সালের ১৯ মাার্চ ওই এলাকার নাজির হোসেন, জবেদ আলী সরকার, ছামান উদ্দিন সারেং, খন্দকার আব্দুল বারী, আছমত আলী খান, আব্দুল বছির মিয়া ও আব্দুল আওয়াল ভাওড়া ও পাইখার মৌজায় ১৫৯ শতক জমি ১৪৮০ নং দলিল মূলে মির্জাপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের নামে দলিল করে দেন।

পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের নামে প্রাপ্ত জমির দলিল মূলে খন্দকার মো. ইউসুফ ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ভাওড়া বিদ্যালয়টি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমোদন নেন। প্রথম দিকে ভাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে পাঠদান চললেও ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

১৯৭৫ সালে বিদ্যালয়টি থেকে ছাত্র ছাত্রীরা প্রথম এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। বর্তমানে ১৩ জন শিক্ষকসহ ৪০৬ জন ছাত্র ও ৪৫৪ জন ছাত্রী বিদ্যালয়টিতে অধ্যয়ন করছেন।

তৎকালীন সংসদ সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের আর্থিক অনুদানে ১৯৭৪ সালে ভাওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ভাওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য ৫১ শতক জমি ক্রয় করে ওই জমির উপর বিদ্যালয়ের মূল ভবন নির্মাণ করা হয়।

এরপর এলাকার লোকজনের সহযোগীতায় ১৯৮০ সালে ৭ শতক, ১৯৮৯ সালে খেলার মাঠের জন্য ১০৩ শতক এবং ২০০৩ সালে ২৬ শতক জমি ক্রয় করা হয়। এছাড়া সরকারের কাছ থেকেও ৬৩ শতক জমি বিদ্যালয়ের নামে লিজ নেয়া হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান হাসান জানিয়েছেন। দাতাদের দেয়া জমিসহ বিদ্যালয়ের মোট জমির পরিমান দাঁড়ায় ৪০৯ শতাংশ।

কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন দাতাদের দেয়া ১৫৯ শতাংশ জমিই বেহাত হয়ে গেছে। দাতাদের ওয়ারিশগণরা বিদ্যালয়ের ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ওয়ারিশগনদের মধ্যে অনেকে গোপনে বিদ্যালয়েল জমি বিক্রিও করে দিয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

দাতাদের দেয়া বিদ্যালয়ের জমি যারা অবৈধভাবে ভোগ দখল করে আসছেন বা বিক্রি করে দিয়েছেন বছরের পর বছর তারাই দাতা সদস্য হিসেবে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের জমি দাতা মরহুম আছমত আলী খানের ছেলে মো. মর্তুজ আলী খান বিদ্যালয়ের জমি নিজের ভোগ দখলে থাকার কথা স্বীকার করে বলেন বিদ্যালয়ের মঙ্গলের জন্য যা করা দরকার তিনি তাই করবেন। কিন্তু অনেকে তো বিদ্যালয়ের নামের জমি ইতিমধ্যে বিক্রিও করে দিয়েছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আরেক দাতা সদস্য মরহুম জবেদ আলী সরকারের নাতি মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সরকারী নিয়মে খাতা পত্রে জমি দেখানোর প্রয়োজন হয়। সেজন্য অনেকেই জমি লিখে দিয়েছিলেন। সেখানে তার দাদাও ২৮ শতাংশ জমি ভাওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে দান করেছিলেন। কিন্তু জমিটি তিনি ভোগ দখল করেন বলে জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের নামের ১৫৯ শতাংশ জমি বেহাত হওয়ায় এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রী ও সচেতন মহল বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভাওড়া গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট্য ক্রীড়াবিদ মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বিদ্যালয়ের জমি বেহাত হওয়ার কথা জানিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, আশা করছি দাতা ও তাদের ওয়ারিশগণ অনতি বিলম্বে বিদ্যালয়ের জমি বিদ্যালয়কে ফেরত দিবেন।

ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের জমির বেহাত হওয়ার কথা কয়েকদিন আগে আমি জানতে পেরেছি।বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আরও ভাল বলতে পারবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবু সাঈদ ভুইয়া বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা আইনজীবির সঙ্গেও কথা বলেছি। তিনি বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধারে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রক্ষায় আইনগত সকল প্রকার সহযোগিতা দেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।