রাজস্ব ঘাটতি পূরণ হবে যেভাবে...

অালোকিত ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩২ পিএম, রোববার, ৩০ জুলাই ২০১৭ | ৭৪৭
ভ্যাট আইন স্থগিত করায় যে ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হওয়ার কথা, তা সংস্থানের একটি পরিকল্পনা সংসদীয় কমিটিতে তুলে ধরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তাতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন খাত থেকে ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার সংস্থান হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। ফলে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ৫ হাজার ২০ কোটি টাকা। আজ রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এনবিআরের অর্থায়নের নতুন পরিকল্পনায় দেখা গেছে, ঘাটতি পূরণে সিগারেট ও বিড়ি খাত থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, ব্যাংক হিসাব ও বিমানের টিকিটে আবগারি শুল্ক থেকে ৫০০ কোটি টাকা, ফাস্ট ফুডের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক থেকে ১০০ কোটি টাকাসহ মোট ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হবে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায় মনিটরিং জোরদারসহ এডিআর ব্যবস্থা কার্যকর করার মাধ্যমে বকেয়া রাজস্ব আহরণ ও কর প্রতিপালন বাড়ানোর মাধ্যমে আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধির কারণে ৯ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ প্রাক্কলন করা হয়েছে। সবমিলে ঘাটতি দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ২০ কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন বিভিন্ন ভ্যাট কমিশনারেটের বড় মামলাগুলো নিষ্পত্তি এবং নিরঙ্কুশ বকেয়া আদায়ের লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনবিআরের পরিকল্পনায় বলা হয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছ থেকে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা এবং পেট্রোবাংলার কাছ থেকে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া পাওনা আছে। এই বকেয়া পরিশোধে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সুইস ব্যাংকসহ বিদেশের অন্যান্য ব্যাংকে অর্থ পাচার নিয়ে এবং অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ স্থানান্তরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গৃহীত সর্বশেষ ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, সুইস ব্যাংকে টাকা পাচারের সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অবস্থান তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য ব্যাংকিং লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে, ব্যক্তিপর্যায়ে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং সেক্টরে জমার পরিমাণ কমেছে। বিএফআইইউর পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, তাদের কাছে সংরক্ষিত অর্থ পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে অভিযুক্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব এবং অন্যান্য আর্থিক সম্পদের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য সুইজারল্যান্ড এআইইউ-কে এগমন্ট সিকিউর ওয়েবের মাধ্যমে ১৩ জুলাই অনুরোধ করেছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৈঠকে জানানো হয়, এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ স্থানান্তরের অনিয়মের দায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যে কোনো ঋণ মঞ্জুরির ক্ষেত্রে ঋণ প্রস্তাব পর্যালোচনা, পর্যাপ্ত জামানত সংরক্ষণ ও ঋণ বিতরণ-পরবর্তী মনিটরিংয়ে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ব্যাংকটিকে পরামর্শ দেওয়া হয়। এবি ব্যাংকের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে বিদেশে স্থানান্তরিত অর্থ উদ্ধারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে তদন্ত করে দ্রুত কমিটিকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়। স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে কমিটি সদস্য মো. আবদুল ওয়াদুদ, নাজমুল হাসান, ফরহাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মো. শওকত চৌধুরী ও আখতার জাহান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়ার কারণে যে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হবে, তা পূরণের উদ্দেশ্যে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি এবং বকেয়া আদায়ের মাধ্যমে পূরণ করার সুপারিশ করা হয়।