মধুপুরে বংশাই নদী দখল হারাচ্ছে নদীর নাব্যতা!

মধুপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:৫৮ পিএম, সোমবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৮ | ২৮৫

টাঙ্গাইলের মধুপুরের উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক সময়ের খরস্ত্রোতা তে বংশাই কালক্রমে নদীর গতিপথ রোধ হওয়ায় নির্জীব হয়ে পড়ে নদীটি। নদীটির পাশদিয়ে গড়ে ওঠেছে অবৈধ স্থাপনা।

সে কারনে নদীটি ঐতিহ্য হারিয়ে দিন দিন মরতে বসেছে । অথচ এক সময় নদীর বুকে বড় বড় লঞ্চ স্টীমার চলাচল করতো। ভাটিয়ালি, জারি ,সারি ও ভাওইয়া গানে মুখরিত ছিল নদীর পাড়ের এলাকা। সে সময়ে সহজ যোগাযোগের একমাত্র সহজ মাধ্যম ছিল নদী পথ। এসব কিছুই এখন শুধুই স্মৃতি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে নদীটি প্রায় পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। ঐতিহ্য একসময়ের স্রোতস্বিনী বংশাই নদী দখলের কবলে পড়ে সংকুচিত হয়ে ছোট নালায় পরিণত হয়েছে। অবৈধভাবে দখল করে বাসা-বাড়ী নির্মাণ করার ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে নদটি। শুধু দখল নয় পার্শ্ববর্তীদের নিক্ষিপ্ত বর্জ্যে পানি দূষিত ও আর্বজনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর দুই তীর দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গোলাবাড়ী ব্রিজ থেকে শুরু করে দামপাড়া গ্রামের বাকে বংশাইয়ের দুই পাড় দখলের দৃশ্য কারো চোখ এড়ায় না।

বিশেষ করে কাইতকাই, হাসপাতাল গেটের সামনে, মধুপুর বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে হাটখোলা, বোয়ালী গ্রামের সীমানা এলাকা, দামাপাড়া পর্যন্ত বংশাইয়ের প্রস্থ উদ্বেগজনক। জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র জামালপুরের সীমানা পেরিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে মিশেছে এই বংশাই নদ। ঢাকার সাভার-ধামরাইয়ে বংশাই নামেই এ নদের পরিচিতি। এক সময় বংশাইয়ের জলে বনের পশু-পাখি তৃষ্ণা মেটাতো। দুই/তিন দশক আগে এ নদ দিয়ে চলতো পাল তোলা নৌকা। এসব এখন শুধুই ইতিহাস।

এ বিষয়ে একটি সেমিনারে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি জানান, বংশাইয়ের সীমারেখা সবাই জানে। তবু চোখের সামনে নদটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কারো কিছু বলার নেই। বংশাই নদটি উদ্ধারে পানি উন্নয়ন বোডের প্রকল্প না থাকায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোডের টাঙ্গাইল জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান সিরাজ জানান, নদ-নদী দখল রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের করণীয় কিছু নেই। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের এখতিয়ারভুক্ত।

টিআইবি’র সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) মধুপুর শাখার সভাপতি ডা. মীর ফরহাদুল আলম মনি জানান, বংশাই নদ হলো মধুপুরের ফুসফুস। নিজেদের স্বার্থে এ নদটি টিকিয়ে রাখাতে হবে। মধুপুর পৌরসভার মেয়র মাসুদ পারভেজ জানান, শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পথচারীদের হাঁটার জন্য বংশাইয়ের দুই তীর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে পারলে মেয়র হিসেবে একটি স্বপ্নের সফল পরিণতি হবে।

পরিবেশ উন্নয়ন সংগঠন ‘বেলা’র টাঙ্গাইলের সিনিয়র গবেষক সোমনাথ লাহেড়ী সাংবাদিকদের জানান, মধুপুরের বংশাই একটি ঐতিহ্যবাহী নদ। ভরাটের কারণে জলজ প্রাণী ও জীববৈচিতত্র্য নষ্ট হচ্ছে। আইন ও উচ্চ আদালতের ২০১১ সালের এক আদেশ মতে নদী জলমহাল দখল বেআইনি।

ফৌজদারি ধারায় শাস্তিযোগ্য। তিনি বংশাই দখল রোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো.মাহবুবুল হক জানান,বংশাই নদী অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া চলছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, ইতোমধ্যে উপজেলা ভূমি অফিসকে নদটির দুই পাড়ের দখল চিহ্নিত করে দখলদারদের তালিকা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দখল এলাকা ও দখলদারদের বিষয়ে পরে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।