কোটা নিয়ে জাতীয় সংসদে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:৪৭ পিএম, বুধবার, ১১ এপ্রিল ২০১৮ | ১৮৬

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার জাতীয় সংসদে এ নিয়ে কথা বলেছেন।

সরকারদলীয় সাংসদ জাহাঙ্গীর কবির নানকের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলোচনা হলো, একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ দিল, কেবিনেট সেক্রেটারিকে আমি দায়িত্ব দিলাম। তারা সে সময়টা দিল না। মানি না, মানব না বলে তারা যখন বসে গেল, আস্তে আস্তে সব তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো। খুব ভালো কথা, সংস্কার সংস্কার বলে...সংস্কার করতে গেলে আরেক দল এসে বলবে আবার সংস্কার চাই। কোটা থাকলেই সংস্কার। আর কোটা না থাকলে সংস্কারের কোনো ঝামেলাই নাই। কাজেই কোটা পদ্ধতি থাকারই দরকার নাই। আর যদি দরকার হয় আমাদের কেবিনেট সেক্রেটারি তো আছেন। আমি তো তাঁকে বলেই দিয়েছি, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বসে তাঁরা কাজ করবেন। সেটা তাঁরা দেখবেন। আমি মনে করি, এ রকম আন্দোলন বারবার হবে। বারবার শিক্ষার সময় নষ্ট হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ইউনিভার্সিটিগুলোতে ক্লাস বন্ধ। পড়াশোনা বন্ধ। এরপর আবার ভিসির বাড়ি আক্রমণ। রাস্তাঘাটে যানজট। মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষের কষ্ট। সাধারণ মানুষ বারবার কষ্ট পাবে কেন? এই বারবার কষ্ট বন্ধ করার জন্য, আর বারবার এই আন্দোলনের ঝামেলা মেটাবার জন্য কোটাপদ্ধতি বাতিল। পরিষ্কার কথা। আমি এটাই মনে করি, সেটা হলো বাতিল।’

ছাত্র নিহত হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিথ্যা গুজব ছড়ানোর স্ট্যাটাস কে দিল? অঘটন ঘটলে দায়িত্ব কে নিত?’

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘তারা দাবি করেছে, খুব ভালো কথা। আমরাতো বসে নেই। সোমবারে কেবিনেটে বসে এ বিষয়টা আলোচনা করলাম। আমাদের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে বসবে, এবং বসল। সে সঙ্গে আমি কেবিনেট সেক্রেটারিকে যার কাজ এটা, নির্দেশ দিলাম এটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন। যাকে যাকে দরকার তাদের নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করুন। যে দাবিটা করেছে তা কতটুকু কী করা যায়। আর মন্ত্রী গেল তাদের সঙ্গে বসল। সমঝোতা হলো। অনেকে মেনে নিল, অনেকে মানল না। সারা রাত বেশ অনেক ছাত্রছাত্রী টিএসসিতে থেকে গেল। কেন? আলোচনা হচ্ছে, আন্দোলন চালানোর কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে। তা ছাড়া ভিসির বাড়ি ভাঙা, রাস্তায় আগুন দেওয়া। এমনকি মঙ্গল শোভাযাত্রার জিনিস পুড়িয়ে তছনছ।’

তিনি বলেন, ‘মেয়েরা যে এত রাতে হল থেকে বেরিয়ে আসল। মাননীয় স্পিকার আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমি বারবার ফোন করেছি। আমি সঙ্গে সঙ্গে নানককে পাঠিয়েছি।সে ওখানে গেল। প্রেসকে বলল। আলোচনা করল। তারপরও তারা কোনো কিছু মানল না। এমনকি ঢাকার বাইরে সবাই রাস্তায় নেমে গেল। কী কোটা সংস্কার। এ দাবি একবার না আরও অনেকবার এসেছে। আমরা একটি নীতি নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি। আমাদের ছেলে মেয়ে যারা করছে আমাদের ছেলে মেয়ে কেন অনেকে আমার নাতির বয়সী। তাদের কীসে মঙ্গল হবে না হবে আমরা কি বুঝি না? ১৯৭২ সাল থেকে এ কোটা পদ্ধতি চলছে। সময়-সময় সংস্কার করা হয়েছে। কোটা যাই থাক, আমরা সব সময় যে কোটা পূরণ না হয়, যে তালিকা থাকে সেখান থেকে তাদের চাকরি দিয়ে দিই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩৩ তম বিসিএসে মেধার ভিত্তিতে ৭৭.৪০ নিয়োগ পেয়েছে। ৩৫তম ৬৭.৪৯, ৩৬ তম ৭০. ৩৮ ভাগ। মেধাবীরা বাদ যায়নি। চলছে। মানছে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধার থেকে পূরণ করা হচ্ছে। সবাই মেধাবী। রিটেনে পাশ করতে হয়। বিসিএস যারা দেয় তারা সবাই মেধাবী। কোটায় যারা তারাও একসঙ্গে পরীক্ষা দেয়। রিটেনে তাদের পাশ করতে হয়। সেখানে কোথায় সংস্কার একটা দাবিতে বলা আছে, যেখানে কোটায় পাওয়া যাবে না মেধা থেকে দেওয়া হবে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা চায় না, তাহলে দরকারটা কী। কোটা পদ্ধতিরই দরকার নই। যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী তাদের অন্যভাবে চাকরি ব্যবস্থা করে দিতে পারব। এই আন্দোলন যারা করেছে যথেষ্ট, এখন তারা ক্লাসে ফিরে যাক। ভিসির বাড়ি যারা ভেঙেছে, লুটপাট করেছে, লুটের মাল কোথায় আছে, কার কাছে আছে ছাত্রদেরই তো বের করে দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসির বাড়িতে আক্রমণ ন্যক্কারজনক ঘটনা।’ তিনি আরো বলেন, ‘ছবি দেখে মনে হয়েছে ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ভিসির বাসভবনে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে, গোয়েন্দারা কাজ করছে।