ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্কুল ফাকি
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় শনিবার সরকারি অফিসগুলো ছুটি থাকায় অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় চলে নিজের গতিতে। শিক্ষা অফিসের কোন নিয়ম মানছেই না অনেকে।
গতকাল শনিবার (৩ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে উপজেলার কয়েকটি স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে এর বাস্তব চিত্র।
সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা শনিবার সরকারি ছুটি পালন করায় এবং স্কুলের কোন তদারকি না করায় স্কুলগুলো সকাল ৯টায় আগমনের পরিবর্তে আগমন সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয়। আবার স্কুল ছুটির নিয়ম বিকাল সাড়ে ৪টার সময় হলেও ৩ টার পরেই স্কুল ছুটি দিয়েই চলে যান শিক্ষকরা।
স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের আগমন ও প্রস্থানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শিক্ষকেরা বলেন শনিবার একটু দেরি করে আসি। সেদিন স্যারেরা ক্লাস্টারে আসেন না। তাহলে সরকারি এ নিয়মকে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অবহেলা করে তাদের নিজের মতো করে চালান স্কুলগুলো। অথচ নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলার মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার দিক থেকে সেরা পর্যায়ে রয়েছে কিশোরগঞ্জ উপজেলা।
ইতোপূর্বে কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের সিঙ্গেরগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গাড়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উপজেলার মধ্যে শিক্ষার দিক থেকে শতভাগ এ প্লাস অর্জন করে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যে কারণে পার্শ্ববর্তী জেলার অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী ও শিক্ষা কর্মকর্তারাও তাদের ব্যতিক্রমধর্মী পাঠদান দেখতে আসেন।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসানের নতুন শিক্ষা পদ্ধতি উপজেলার সকল প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন করার কারণে শিক্ষার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া এ উপজেলা এখন সারা বাংলাদেশের মধ্যে সুনামের সহিত উদাহরণ হিসাবে রূপ নিয়েছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আগমন প্রস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকাল সোয়া ৯ টার মধ্যে শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের পর শিক্ষা অফিসের ই-মেইলে আগমন রিপোর্ট ও বিকেল সাড়ে ৪ টার মধ্যে প্রস্থান রিপোর্ট পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করা হলে নীলফামারী জেলাসহ অন্যান্য জেলাগুলোতেও নেয়া হয়েছে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
এতে করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার সংখ্যাও কমে গেছে। কিন্তু ডিজিটাল এ্যাটেনডেন্সকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একদল চতুর শিক্ষক সমাজ ডিজিটাল অনিয়ম করেই চলছে। আর তাদের অনিয়মের ফলে যুগান্তকারী এ সাফল্য এখন মুখ থুবড়ে পড়ার পথে। অনেকেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তা এ অনিয়ম রোধ করতে না পারলে সব সাফল্য ধুলোয় মিশে যাবে। কিছু ফাঁকিবাজ শিক্ষকের কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র বিদ্যালয় হিসাবে থাকলেও তাদের নেই কোন দায়িত্ববোধ।
শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের দলিরাম দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ৪জন শিক্ষকের মধ্যে প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার রায় পিটিআই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন এবং একজন সহকারী শিক্ষিকা স্মৃতি রানী রায় মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। কিন্তু অপর দুই সহকারী শিক্ষকের মধ্যে সহকারী শিক্ষক গোলাম রব্বানী সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকলেও সহকারী শিক্ষিকা হাসিনা বেগম স্কুলে আসেন সকাল সাড়ে ৯ টায়।
অপরদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় গিয়ে সয়রাগন্ধা দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরন্নবী,দিজেন্দ্র নাথ ও দক্ষিণ সয়রাগন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এমদাদুল অনুপস্থিত ছিলেন।
এমদাদুল হক জানান, আমি ও সয়রাগন্ধা দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরন্নবী ক্লাষ্টারের পিকনিকের বিষয়ে রাস্তায় কথা বলতে একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু সয়রাগন্ধা দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরন্নবী বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে হোম ভিজিটের কারণে স্কুলে দেরিতে আসছেন বলে জানান। তবে দলিরাম দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হাসিনা বেগম বিলম্বের বিষয়টি স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ক্লাষ্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু জাহের মো. সাইফুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসানের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে জানান।