নাটোরে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র বন্ধ করায় খামারির মাথায় হাত\

দুধ ঢেলে প্রতিবাদ জানিয়েছে খামারিরা

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:৫৯ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ২৫০

সমবায় মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের (মিল্ক ভিটা ) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দুধের কাঙ্খিত গুনগতমাণ ও পরিমাণে সংগ্রহ না হওয়ার অজুহাতে নাটোরের নলডাঙ্গার বাসুদেবপুরে অবস্থিত দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রে দুধ ক্রয় বন্ধ করে দিয়েছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মিল্ক ভিটার দুধ ক্রয় পুনরায় চালুর দাবিতে মিল্কভিটা কেন্দ্রটির সামনে দুধ ঢেলে প্রতিবাদ জানিয়েছে খামারিরা।

এদিকে কেন্দ্রটি হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই কেন্দ্র দুধ সরবরাহকারী ১৩ সমিতির প্রায় পাঁচ শতাধিক খামারি দুধ সরবরাহ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তবে খামারীদের সাখে মতবিনিময় করে দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্রটি চালু রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্রটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেকেন্দার আলী

জানা গেছে, সমবায় মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার বাসুদেবপুরে ২০০২ সালে দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রটি (মিল্ক ভিটা ) প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এই কেন্দ্র উপজেলার ১৩ সমবায় সমিতির প্রায় তিন শতাধিক খামারি দুধ সরবরাহ করে আসছিল। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ লিটার দুধ সরবরাহ করে থাকেন খামারিরা।

কিন্তু গত ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় লিমিটেড কার্যালয় থেকে দুধের গুনগত মান ও সরবরাহের পরিমান কম হওয়ার অজুহাতে দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্রটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে নলডাঙ্গার বাসুদেবপুরের দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্রটির ব্যবস্থপানা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সেকেন্দার আলী কেন্দ্রে দুধ সরবরাহকারী খামারিদের অবহিত করেন। পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে কেন্দ্রটিতে দুধ সরবরাহকারী উপজেলার ১৩টি সমবায় সমিতির সভাপতি, সাধারন সম্পাদকসহ প্রায় দুই শতাধিক খামারী অবস্থান নেন। এসময় তারা কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেকেন্দার আলীর সাথে মতবিনিময় করে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। পরে তারা কেন্দ্রটির সামনে দুধ ঢেলে কেন্দ্রটি বন্ধের প্রতিবাদ ও দ্রুত চালুর দাবি জানান।

খামারিরা আরো জানান, ২০০২ সালে বাসুদেব পুরে দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্রটি চালুর পরে কেন্দ্রটিতে ৬৩টি সমবায় সমিতির ১৩৬৩ জন খামারি দুধ সরবরাহ করে আসছিলেন। প্রথম দিকে কেন্দ্র থেকে খামারিদের সরকারিভাবে গাভী ঋন, চিকিৎসা সেবা, গো খাদ্য নিশ্চিত করা হলেও সময়ের ব্যবধানে সকল সুবিধা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুধের দামও দেওয়া কম দেওয়া হতো। এতে করে খামারিরাও দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্রে দুধ সরবরাহকারী খামারীর সংখ্যা কমে যায়।

জহুরুল ইসলাম বাবু নামে এক খামারি জানান, কেন্দ্রটিতে উপজেলার অনেক খামারিরা দুধ সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কেন্দ্রটি বন্ধ হলে খামারীরা আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বে। বেন্দ্রটি চালুর সময় প্রথম প্রথম গাভী লোন, চিকিৎসা সেবাসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হত। কিন্তু এখন আর কোন সুবিধা পাওয়া যায় না।

মানিক চন্দ্র সরকার নামে অপর এক খামারি জানান, বাজারে দুধের দাম প্রতি লিটারে ৫০-৫২টাকা । অথচ কেন্দ্রটিতে আমরা প্রতি লিটার ৩৫টাকায় সরবরাহ করি। দুধের মূল্য কম দেওয়ায় অনেক খামারী এখন দুধ সরবরাহে অনিহা দেখাচ্ছেন। ফলে ধীরে ধীরে এখানে দুধ সরবরাহকারী খামারীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

আব্দুস সামাদ নামে অপর এক খামারী বলেন, হঠাৎ করে দুধ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া পরিবারের ব্যয়ভার নিয়ে খুব সমস্যায় পড়ে গেছি। কেন্দ্রটি দ্রত চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

এব্যাপারে দুগ্ধ শীতলীকরন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সেকেন্দার আলী জানান, কেন্দ্রে দুধ সরবরাহ বন্ধ রাখার নির্দেশ পাওয়ার পরেই সকল খামারীদের অবহিতকরা হয়েছে। কেন্দ্রটি যাতে চালু রাখা যায় সেই লক্ষে সকল খামারীদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

 

আব্দুল মজিদ/এইচএইচ