বাণিজ্য যুদ্ধের আবহে এশিয়া সফরে ট্রাম্প: শি জিনপিংয়ের সঙ্গে চুক্তির চেষ্টা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার 'ডিল মেকিং' সক্ষমতা ঝালিয়ে নিতে পাঁচ দিনের দীর্ঘ এশিয়া সফরে রওনা হয়েছেন। শুক্রবার রাতে ওয়াশিংটন ছাড়ার পর মালয়েশিয়া, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া হয়ে তার সফরের মূল আকর্ষণ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক। তার কঠোর বাণিজ্যনীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এ অঞ্চলে ট্রাম্প মূলত বাণিজ্য চুক্তি, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছেন। খবর রয়টার্স।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর এটি ট্রাম্পের প্রথম এশিয়া সফর এবং সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ যাত্রা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ অব্যাহত থাকলেও, ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক সাফল্য, ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিটি বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।
ওয়াশিংটন ও বেইজিং একে অপরের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে। সে সঙ্গে, প্রযুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ খনিজ বাণিজ্যে নিয়ন্ত্রণ আরোপের হুমকি দিয়েছে দুই পক্ষ। এ প্রেক্ষাপটে আগামী বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির নেতার বৈঠক নিয়ে সন্দেহ ও জল্পনা রয়েছে স্বাভাবিকভাবেই।
বৈঠক সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছেন, কোনো পক্ষই আশা করছে না যে, জানুয়ারিতে ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের আগের বাণিজ্য সম্পর্ক রাতারাতি ফিরে আসবে। বরং, দুই পক্ষের প্রস্তুতিমূলক আলোচনা মতানৈক্য সামলানো এবং ছোটখাটো উন্নতি ঘটিয়ে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে সীমিত শুল্ক ছাড়, বর্তমান শুল্কের হার বজায় রাখা অথবা চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন সয়াবিন ও বোয়িং বিমান কেনার প্রতিশ্রুতি থাকতে পারে। বিনিময়ে, ওয়াশিংটন বেইজিংয়ে আরো উন্নত কম্পিউটার চিপ সরবরাহ করতে পারে, এবং চীনও দুর্লভ মৃত্তিকা খনিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে পারে।
তবে আলোচনা একেবারে ফলপ্রসূ নাও হতে পারে। হোয়াইট হাউজ আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকের ঘোষণা দিলেও চীনের পক্ষ থেকে এখনো তা নিশ্চিত করা হয়নি। ট্রাম্প অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি শি'র সঙ্গে 'বেশ দীর্ঘ বৈঠক' করবেন এবং অনেক প্রশ্ন, সন্দেহ এবং দুই দেশের বিশাল অভিন্ন সম্পদ নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
চুক্তি না হলেও ট্রাম্প আগামী ১ নভেম্বর থেকে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে মোট প্রায় ১৫৫ শতাংশ করার হুমকি দিয়েছেন। এ শুল্ক কার্যকর হলে বেইজিংয়ের কাছ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসতে পারে এবং চলমান শুল্ক-যুদ্ধ হতে পারে আরো তীব্র।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ভিজিটিং ফেলো মীরা র্যাপ-হুপার বলেছেন, ট্রাম্পের এশিয়া নীতির মূল জায়গা হচ্ছে তার কঠোর বাণিজ্যনীতি এবং প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। তিনি বলেন, এই সফরের প্রধান প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কার পাশে আছে এবং কীসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
ট্রাম্প রোববার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিতব্য আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সেখানে তিনি থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের তদারকি করতে পারেন। এরপর ট্রাম্প জাপানে যাবেন। সেখানে তিনি সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। আশা করা হচ্ছে, তাকাইচি সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং ট্রাম্পের নির্দেশিত ৫৫০ বিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের আগে ট্রাম্পের সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তবে ট্রাম্প এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) নেতাদের ফোরাম শুরু হওয়ার আগেই ওয়াশিংটনে ফিরবেন।
বাণিজ্য ছাড়াও, তাইওয়ান এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চীনের মিত্র রাশিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মতো ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলোও আলোচনায় আসতে পারে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি হংকংয়ের কারাগারে আটক গণতন্ত্রপন্থী সংবাদপত্র অ্যাপল ডেইলি-এর প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাইয়ের মুক্তির বিষয়টি শি'র কাছে উত্থাপন করবেন।
এছাড়া ট্রাম্প মালয়েশিয়া ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি শেষ করার এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এরইমধ্যে হওয়া একটি চুক্তিকে আরো সুসংহত করার চেষ্টা করছেন।
উত্তর কোরিয়া ইস্যুও আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়াং উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের সঙ্গে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে ট্রাম্পকে উৎসাহিত করতে চান। যদিও কোনো কিম-ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাবনা এখনো নিশ্চিত হয়নি।
