শত্রু মিত্র উভয়ের কাছে প্রত্যাখ্যাত ট্রাম্পের গাজা দখলের প্রস্তাব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৩৫ পিএম, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ | ৮২

ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করে যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে বলে যে প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা এখন নিন্দা কুড়াচ্ছে আমেরিকার শত্রু থেকে মিত্র উভয়ের কাছেই। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান মিত্র দেশ, যেমন মিশর ও জর্ডান এরইমধ্যে গাজার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে অঞ্চলটির বাইরে অন্যত্র পুনর্বাসনের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। খবর এপি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা দখল করে নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে গ্রহণ করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ বিস্ময়কর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এ ঘোষণা ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূলকে সমর্থন করার শামিল। তিনি দাবি করেছেন, গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানো যেতে পারে এবং এটিকে বাস্তবে রূপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য মোতায়েনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।

তবে, মিশর ও জর্ডানের পর এবার মধ্যপ্রাচ্যে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র সৌদি আরব ট্রাম্পের এই সম্প্রসারিত পরিকল্পনার বিষয়ে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কঠোর ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। দেশটি উল্লেখ করেছে যে, স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পক্ষে তাদের দীর্ঘদিনের অবস্থান দৃঢ়, অবিচল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরব পূর্বে যেমনটি বলেছিল এখনো তা পুনর্ব্যক্ত করছে—ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারের প্রতি কোনো ধরনের আঘাতকে সৌদি আরব সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে, হোক তা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের নীতি, ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করা বা ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা।

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা ও উত্তেজনা তৈরির একটি ফর্মুলা বলে আখ্যা দিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, গণহত্যা ও বাস্তুচ্যুতির জন্য ইহুদিবাদী দখলদার শক্তিকে জবাবদিহির মুখোমুখি করা উচিত। কিন্তু তার বদলে তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে, শাস্তি দেয়া হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রে বিরোধী রাজনীতিকরা দ্রুতই ট্রাম্পের এই ধারণার বিরোধিতা করেছেন। ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস কুনস মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্যকে ‘আপত্তিকর, পাগলাটে, বিপজ্জনক ও নির্বোধ’ বলে সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, এই ধরনের প্রস্তাবের কারণে বিশ্ব আমাদের ভারসাম্যহীন ও অবিশ্বাসযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখবে, কারণ আমাদের প্রেসিডেন্ট পাগলাটে পরিকল্পনা করছেন। কুনস এ সময় উল্লেখ করেন, প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন ট্রাম্প মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বাতিল করতে উদ্যোগী হয়েছেন।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিশ্বব্যাপী কয়েক দশকের সুপ্রতিষ্ঠিত মানবিক কর্মসূচিগুলো কেন আমরা পরিত্যাগ করব এবং এখন বিশ্বে সবচেয়ে বড় মানবিক সংকটগুলোর একটিতে কেন হঠাৎ হস্তক্ষেপ করব?

মিশিগান থেকে নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ও ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আমেরিকান রাশিদা তালিব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ট্রাম্পের এই ধারণাকে ‘খোলাখুলি জাতিগত নিধনের আহ্বান’ বলে অভিহিত করেছেন।