টাঙ্গাইলে দুইমন্ত্রী রাজ্জাক ও টিটুসহ ৫৬ জনের নামে হত্যা মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:৩৭ পিএম, সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪ | ১৭১

টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের বিজয় মিছিলে হামলার ঘটনায় মারুফ মিয়া (১৪) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হয়। নিহতের ঘটনায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের ৫৬ জন নেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে এ হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।

এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন।

গতকাল রবিবার বিকেলে টাঙ্গাইল সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন নিহত মারুফের মা মোর্শেদা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা শহরে বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি পৌর শহরের মেইন রোডে মদের মোড় এলাকায় পৌঁছলে উল্লেখিত ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরিকল্পিতভাবে অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আনন্দ মিছিলে অতর্কিতভাবে হামলা করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এক পার্যায়ে মারুক বাঁচার জন্য রাস্তার পাশে সিটি ব্যাংকের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেন। ওই স্থানে আসামিরাও ঢুকে পড়ে। আসামির মধ্যে একজন মারুফের মাথার ডান পাশের কানের নিচে গুলি করে। গুলি লাগার পর মারুফ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে ছাত্র-জনতারা উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ভোলাকে। দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম সিরাজুল হক আলমগীর কে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তানভীর হাসান ছোট মনির তার বড় ভাই ও জেলা বাস কোচ মিনি বাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, সাবেক এমপি ছানোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি অনুপম শাহজাহান জয়, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, সাবেক এমপি হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি এডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, সহ-সভাপতি আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরণ, সাইফুজ্জামান সোহেল,পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ফারুক, দপ্তর সম্পাদক মো. খোরশেদ আলম, উপ-দপ্তর সম্পাদক আনন্দ মোহন দে,জেলা যুবলীগের সভাপতি মাসুম পারভেজ,সাধারণ সম্পাদক আবু সায়েম বিপ্লব,যুবলীগ নেতা আতিকুর রহমান মোরশেদ, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন তোফা, জেলা ছাত্র লীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন।

টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, নিহত মারুফের মা মোর্শেদা বাদি হয়ে ৫৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১৫০-২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য সোমবার (৫ আগস্ট)  টাঙ্গাইল পৌর শহরের মেইন রোড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিতে নিহত হয় মারুফ। সে শহরের শাহীন স্কুলের দশম শ্রেণী ছাত্র ছিলেন। তিনি সাবালিয়া স্টেশন রোড এলাকার মজনু মিয়া ছেলে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে মারুফ মিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মারুফকে তাদের গ্রামের বাড়ি বাসাইল উপজেলার জশিহাটি গ্রামে দাফন করা হয়।