ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েলের সেঞ্চুরিতে বিশ্বকাপে রেকর্ড জয় অস্ট্রেলিয়ার
ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে রেকর্ড জয়ের নজির গড়লো অস্ট্রেলিয়া। আজ টুর্নামেন্টের ২৪তম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া ৩০৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে নেদারল্যান্ডসকে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে রান বিবেচনায় এটিই সর্ব বৃহৎ জয়। এছাড়া নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের নয়া রেকর্ডও গড়লো অসিরা। ওয়ানডে ইতিহাসে রান বিবেচনায় এটি দ্বিতীয়স্থানে।
ডেভিড ওয়ার্নার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের জোড়া সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার ৯৩ বলে ১০৪ রান করলেও, বিশ^কাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন ম্যাক্সওয়েল। ৪০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ন করে ৪৪ ডেলিভারিতে ১০৬ রান করে আউট হন ম্যাক্সওয়েল। জবাবে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং তোপে ২১ ওভারে মাত্র ৯০ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। স্পিনার এডাম জাম্পা ৮ রানে ৪ উইকেট নেন।
এই জয়ে ৫ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। ৫ ম্যাচ শেষে ভারত ১০, দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড ৮ করে পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষ তিনটিস্থানে আছে। এ ম্যাচ বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় রান রেটে পিছিয়ে পড়ে ৫ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে চলে গেল নেদারল্যান্ডস। এতে নবমস্থানে উঠলো বাংলাদেশ। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার হেরে টেবিলের তলানিতে জায়গা করে নিয়েছিলো ৫ খেলায় ২ পয়েন্ট পাওয়া বাংলাদেশ।
দিল্লিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। এবার দলকে ভালো সূচনা এনে দিতে পারেননি আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ২৫৯ রান করা ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। চতুর্থ ওভারে দলীয় ২৮ রানে বিদায় নেন মার্শ। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১২১ রান করা এ ব্যাটার আজ থামেন ৯ রানে ।
দ্বিতীয় উইকেটে স্টিভেন স্মিথের সাথে শতরানের জুটি গড়েন ওয়ার্নার। ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬৮ বলে ৭১ রান করে ২৪তম ওভারে ফিরেন স্মিথ। ওয়ার্নারের সাথে ১১৮ বলে ১৩২ রান যোগ করেন স্মিথ।
এরপর মার্নাস লাবুশেনকে নিয়ে ৭৬ বলে ৮৪ রান যোগ করে দলের রান ২শ পার করেন ওয়ার্নার। ৪৭ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬২ রান করা লাবুশেন ফেরার পর ৯১ বল খেলে ওয়ানডেতে ২২তম ও বিশ^কাপে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করেন ওয়ার্নার। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। এতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপে টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরিতে মার্ক ওয়াহ, রিকি পন্টিং ও ম্যাথু হেইডেনের রেকর্ড স্পর্শ করেন ওয়ার্নার।
সেঞ্চুরির পর বেশি দূর যেতে পারেননি ওয়ার্নার। নেদারল্যান্ডসের পেসার লোগান ভ্যান বিকের শিকার হবার আগে ১১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯৩ বলে ১০৪ রান করেন এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।
পাঁচ নম্বরে নামা জশ ইংলিশ ১৪ রানে আউট হলে ৪০তম ওভারে উইকেটে আসেন ম্যাক্সওয়েল। ঐ সময় অস্ট্রেলিয়ার রান ছিলো ৪ উইকেটে ২৬৬। ক্রিজে এসেই ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ২৭ বলে ওয়ানডেতে ২৪তম হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ম্যাক্সওয়েল।
এরপর পরের ১৩ বলে আর ৫০ রান তুলে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন ম্যাক্সওয়েল। সেই সাথে ৪০ বলে বিশ^কাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক হন এ ালরাউন্ডার । এতে ভেগে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার আইডেন মার্করামের রেকর্ড। এই বিশ^কাপেই গত ৭ অক্টোবর শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪৯ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন মার্করাম। ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির তালিকায় চতুর্থস্থানে জায়গা করে নেন ম্যাক্সওয়েল।
বিকের করা ইনিংসের শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়ার আগে ৯টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৪৪ বলে ১০৬ রান করেন তিনি। সপ্তম উইকেটে অধিনায়ক কামিন্সের সাথে ৪৪ বলে ১০৩ রান যোগ করেন ম্যাক্সওয়েল। বিশ^কাপে সপ্তম বা তার নীচে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া। যা বিশ্বকাকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে অস্ট্রলিংয়ার সর্বোচ্চ দলীয় রান সংগ্রহ। নেদারল্যান্ডসের বিক ৭৪ রানে ৪ উইকেট নেন। আরেক পেসার বাস ডি লিডে ১০ ওভারে ১১৫ রানে ২ উইকেট নেন। ওয়ানডেতে এটিই সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোলিং ফিগার।
জয়ের জন্য পাহাড়সম ৪০০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ভালো শুরুর চেষ্টা করেন নেদারল্যান্ডসের দুই ওপেনার বিক্রমজিত সিং ও ম্যাক্স ও’দাউদ। ২৯ বলে ২৮ রানের সূচনা করে বিচ্ছিন্ন হন তারা। ৬ রান করা দাউদকে শিকার করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্ক।
প্রথম উইকেট পতনের পর নিয়মিত বিরতি দিয়ে উইকেট হারাতে থাকে নেদারল্যান্ডস। অস্ট্রেলিয়ার জাম্পার স্পিন ঘুর্ণিতে নেদারল্যান্ডসের কোন ব্যাটারই বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। ২১ ওভারে ৯০ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো ডাচরা। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন তেজা নিদামানুরু। অস্ট্রেলিয়ার জাম্পা ৩ ওভারে ৮ রানে ৪ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ৩৯৯/৮, ৫০ ওভার (ম্যাক্সওয়েল ১০৬, ওয়ার্নার ১০৪, বিক ৪/৭৪)।
নেদারল্যান্ডস : ৯০/১০, ২১ ওভার (বিক্রমজিত ২৫, নিদামানুরু ১৪, জাম্পা ৪/৮)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩০৯ রানে জয়ী।