মিয়ানমারের ক্যাম্পগুলো হবে রোহিঙ্গাদের জন্য কারাগার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:২৮ পিএম, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০১৮ | ১৮২

মিয়ানমার-বাংলাদেশ প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা রোহিঙ্গাদের বিপন্ন করবে বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পর তারা নির্যাতন, নিরাপত্তাহীনতা, খাদ্যাভাবে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। খবর বিবিসি।

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে দ্বিপাক্ষিক এ চুক্তিও স্থগিত করা উচিত বলে মনে করছে সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, এ প্রত্যাবাসন চুক্তির ফলে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা এবং স্বার্থ হুমকিতে পড়বে। যদিও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, যে সমস্ত রোহিঙ্গারা ফিরে যাবেন তারা কোথায় থাকবেন, তাদের নিরাপত্তা কতদূর থাকবে সেটাও দেখা হবে।

বাংলাদেশের শরণার্থী প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ বিবিসিকে বলেন, যারা প্রত্যাবাসিত হবেন তারা সেখানে গিয়ে কি অবস্থায় থাকবেন, প্রত্যাবাসনের পর তারা কেমন থাকবেন, তাদের নিরাপত্তা কতদূর থাকবে সেটাও আমাদের দেখতে হবে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এ কাজটা করবে। মিয়ানমারের দিক থেকেও তাদের প্রস্তুতির বিষয় আছে।

উভয় দিক থেকে প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। তারা কিছু কাজ করেছে বলে জানিয়েছে। সেগুলোও দেখতে হবে আমাদের। তবে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে ঘরছাড়া ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা রাখাইন প্রদেশে অস্থায়ী ক্যাম্পে রয়েছেন।

আগে ঘরছাড়া এসব মানুষদের জন্য মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি কিংবা টেকসই প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে অতীতের রেকর্ডও খুবই খারাপ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, সব লক্ষণই বলছে যেসব বার্মিজ ক্যাম্পের পরিকল্পনা করা হয়েছে- সেগুলো হবে রোহিঙ্গাদের জন্য খোলা আকাশের নিচে কারাগার।

তিনি আরও বলেন, ১ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা যে অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে ৫ বছর ধরে দিনাতিপাত করছে, তার চেয়ে নতুন ক্যাম্পগুলো খুব একটা দারুণ কিছু হবে তেমনটি বিশ্বাস করার মত কারণ খুব কমই আছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ে গত ১৬ই জানুয়ারি মিয়ানমার এবং বাংলাদেশ একটি সমঝোতার বিষয়ে ঘোষণা দেয়।

এ চুক্তি অনুসারে ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা ৭ লাখ ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এ চুক্তিকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা ফিজিকাল অ্যারেঞ্জমেন্ট হিসেবে উল্লেখ করছেন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা শোনা গেলেও গতকাল বাংলাদেশের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, সেটি আসলে হচ্ছেনা।

শরণার্থী প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম আজাদ জানান, তারা প্রক্রিয়া শুরু করেছেন তবে প্রকৃত প্রত্যাবাসন শুরু হতে আরও সময় লাগবে। তিনি বলেন, আমরা যদি প্রত্যাবাসনকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখি তাহলে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা যে, কোন নীতির ভিত্তিতে প্রত্যাবাসন সম্পন্ন হবে, দ্বিতীয় হল কাঠামোগত প্রস্তুতি ও তৃতীয় হল শারীরিক বা মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত প্রত্যাবাসন শুরু করা।

তার মতে, তারা প্রথম ধাপটি অতিক্রম করেছেন। কারণ একটি ফ্রেমওয়ার্ক হয়েছে এবং ১৯ শে ডিসেম্বর জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি হয়েছে। এরপর চলতি মাসে নেইপিদোতে এ কমিটির বৈঠকে প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত চুক্তিও সাক্ষরিত হয়। আজাদ জানান, যেসব প্রস্তুতিমূলক কাজ দরকার প্রত্যাবাসনের জন্য সেগুলো হাতে নেয়া হয়েছে, এরপর প্রকৃত প্রত্যাবাসনের কাজে হাত দেয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা।

তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, গত ১৯ শে জানুয়ারি বাংলাদেশের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গারা এ প্রত্যাব্যাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে বিক্ষোভ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, মিয়ানমার সেনাদের দ্বারা হত্যাকাণ্ড, গণধর্ষণ এবং গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের আবার সেই একই সেনাদের তত্ত্বাবধানে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো উচিত হবে না।

তিনি মনে করেন, এ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি লোক দেখানো কর্মসূচি যার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও কার্যকর প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার যে আসলে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না সে বিষয়টি গোপন করা হচ্ছে। বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের ১৬ জানুয়ারির বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। যেখানে গুতেরেস বলেছেন, সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হবে তাদের বাংলাদেশের ক্যাম্প থেকে মিয়ানমারের ক্যাম্পে স্থানান্তর, দীর্ঘদিনের জন্য এ পরিস্থিতির মধ্যে রাখা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার অনুমতি না দেয়া।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণকারীদের তদারকি ছাড়া নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। কিন্তু তারা বলছে, মিয়ানমারের সরকার দাতা সংস্থা, গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের প্রবেশাধিকারের আহ্বান নাকচ করে আসছে। কেবলমাত্র গুটিকয়েক মানবাধিকার সংগঠনকে তারা রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে সাহায্য প্রদানের অনুমতি দিচ্ছে।