করোনায় টাঙ্গাইলের ২০২ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ, বেকার সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষক

স্টার্ফ রিপোটার
প্রকাশিত: ০২:২৭ পিএম, বৃহস্পতিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৮১

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টাঙ্গাইলের ২০২টি কিন্ডারগার্টেন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন সাড়ে চার হাজার শিক্ষক। বেকার হওয়া কিন্ডারগার্টেনের পরিচালক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা চেয়েছেন সরকারের সহযোগিতা। 

টাঙ্গাইল জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন সমন্বয় কমিটি জানায়, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর সরকারি সিদ্ধান্তে গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর দেখা গেছে জেলার ৮১৯টি কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে ২০২টির তালা খোলা যাচ্ছেনা। শিক্ষার্থীরা অন্যত্র চলে গেছে, বেতন বন্ধ থাকায় কোন কোন শিক্ষক ভিন্নভাবে আয় করার চেষ্টা করছেন। একই সাথে জেলার কিন্ডারগার্টেনে কর্মরত ১১ হাজার ৪৩৬ শিক্ষকের মধ্যে ৪ হাজার ৫৮৬ জন বেকার হয়ে পড়েছেন।

সমন্বয় কমিটি আরো জানায়, টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে মির্জাপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে। এ উপজেলায় ১১০টির মধ্যে ৩৫টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে। সখীপুরে ১১০টির মধ্যে ২৯টি, কালিহাতীতে ৮১টির মধ্যে ২৮টি, ঘাটাইলে ৯৪টির মধ্যে ২৪টি কিন্ডারগার্টেন এখন পুরোপুরি বন্ধ। গোপালপুর উপজেলায় সবচেয়ে কম কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে। এখানে ৩০টির মধ্যে মাত্র ৪টি স্কুল বন্ধ হয়েছে।

সরেজমিন টাঙ্গাইল পৌর শহরের আশেকপুর এলাকার রেডিয়্যান্স স্কুল এন্ড কলেজ একাডিম, আকুর টাকুর পাড়া এলাকার কর্ডোভা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল, দক্ষিণ থানাপাড়ার হলি ফেইথ পাবলিক স্কুল ও টিচিং সেন্টার, শান্তিকুঞ্জ মোড় এলাকার দি টাঙ্গাইল ক্যাডেট স্কুল ও কোচিং আর ইউনিক প্রি-ক্যাডেট স্কুলটি বন্ধ দেখা গেছে। এছাড়াও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের পিচুরিয়া হাবিব প্রি-ক্যাডেট স্কুলটিও বন্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের পিচুরিয়া হাবিব প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, করোনার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রথম দিকে ঋণ করে শিক্ষকদের বেতন দেয়া হয়েছে। এরপর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় স্কুলের তিনটি টিনের ঘর বিক্রি করতে হয়। সর্বশেষ তিনি বন্ধ করছেন স্কুল কার্যক্রম। এর ফলে শিক্ষকরাও বেকার হয়েছেন। স্কুলের ঘর গুলো বিক্রি করে বর্তমানে ফাঁকা জায়গায় সবজির চাষ শুরু করেছেন তিনি।

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়েছে টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়া এলাকার কর্ডোভা রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহিন আল মাসুদ জানান, ২০১৪ সালে তিনি স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। করোনাকালে স্কুলটি বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এর ফলে স্কুলে কর্মরত ১৮জন শিক্ষক বেকার হয়েছেন। ভাড়া দিতে না পারায় ভবনটিও তাকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। স্কুলে পড়–য়া আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীও অন্যত্র চলে গেছে।
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফরিদ হোসেন জানান, ২০০০ সালে স্থাপিত হয় আশেকপুর এলাকার রেডিয়্যান্স স্কুল এন্ড কলেজ একাডিম। করোনার আগেও প্লে-৫ম শ্রেণী পর্যন্ত স্কুলটিতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল প্রায় তিন শতাধিক। স্কুলে কর্মরত শিক্ষকও ছিলেন ১২জন। দীর্ঘ দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় আর ছাত্র-ছাত্রীর বেতন না পেয়ে বন্ধ করে দিতে হয়েছে স্কুলটি। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন স্কুলে কর্মরত শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় করটিয়ার একটি হোমিও চিকিৎসকের সহকারি হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি।

বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্কুল শিক্ষক আমেনা জানান, বেতনের টাকা দিয়ে নিজের কেনাকাটাসহ ব্যক্তিগত অনেক কাজ করতে পারতাম। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম সমস্যায় আছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা উপকৃত হতাম। 

কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক কবির জানান, স্কুলে চাকুরি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই চলত আমাদের সংসার। করোনায় আমাদের স্কুলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। সরকার কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রণোদনা দিলে তাদের অনেক উপকার হত।
হলি ফেইথ পাবলিক স্কুল ও টিচিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সাহীমা খাতুন জানান, ১৯৯৮ সালে স্থাপিত হয়েছে আমার স্কুলটি। করোনার আগ পর্যন্ত আমার স্কুলটি বেশ ভালোভাবেই চলছিল। প্লে-৫ম শ্রেণী পর্যন্ত আমার স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় দুই শতাধিক। কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যাও ছিল ১২জন। করোনায় দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষকদের বেতন দিতে না পেরে স্কুলটি বন্ধ করতে হয়েছে। এর ফলে শিক্ষকরাসহ আমি বেকার হয়ে পরেছি। সরকারি সহযোগিতা দাবি করেছেন তিনি।

জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক নাসির আহমেদ জানান, করোনাকালে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন গুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। 

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর কতগুলো কিন্ডারগার্টেন বন্ধ আর চালু রয়েছে সেই তথ্য সংগ্রহ করছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা।