কক্সবাজারে অভিভাবক নির্যাতনের মূল হোতাদের খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ

জেলা সংবাদদাতা, কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৩:১৮ পিএম, রোববার, ১৪ জানুয়ারী ২০১৮ | ২৯৫

কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া স্কুলে অভিভাবক আয়াত উল্লাহর হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতনের ঘটনার হোতাদের খুঁজে পাচ্ছেনা পুলিশ।

ঘটনার ৬ দিনে একজন আসামীও গ্রেফতার হয়নি। ন্যাক্কারজনক ঘটনার মূল হোতা এনামুল হক ও মাস্টার নজিবুল্লাহকে বাদ দিয়ে মামলা করায় সব মহলে সমালোচনা হচ্ছে। এ জন্য ভিকটিমকে দুষছে স্থানীয়রা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া জানান, ঘটনায় জড়িত কোন আসামীকে ছাড় দেয়া হবেনা। ভিডিও ফুটেজে যাদের স্পষ্ট দেখা গেছে তাদের রেহায় নেই। বিশেষ করে স্কুল কমিটির সভাপতি এনামুল হক ও সহকারী শিক্ষক নজিবুল্লাহ মামলা থেকে বাদ যাওয়ায় বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। তাদের নাম্বার ট্রেকিং-এ দেয়া হয়েছে। এই দুই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে যেখানে পাওয়া যায় আটক করা হবে। কোন নিরীহ লোককে মামলায় জড়ানো হবেনা।

ওসি আরো জানান, প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে মিজানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন আসামীকে ধরতে সিভিল পোষাকে অভিযানে যায় পুলিশ। সঠিক অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় কোন আসামী গ্রেফতার করা যায়নি। যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান রনজিত কুমার বড়ুয়া।

এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষক তার শোকজের লিখিত জবাব দিয়েছেন। তার আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল হকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আভাস পাওয়া গেছে।

এদিকে সারাদেশে বহুল আলোচিত ঘটনা তদন্ত করে গেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মুমিনুর রশীদ। ১১ জানুয়ারী বিকালে তিনি সরেজমিন ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে ভিকটিম আয়াত উল্লাহর জবানবন্দি নেন। খরুলিয়া স্কুলের শিক্ষক ও কর্মচারীদের কাছ থেকেও ঘটনার বিষয়ে জানেন।এ সময় সঙ্গে ছিলেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নোমান হোসেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. সেলিম উদ্দিন।

গত ৭ জানুয়ারী সকালে খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলে ছেলে শাহরিয়ার নাফিস আবিরের ফলাফল জানতে গিয়ে শিক্ষকদের রোষানলে পড়েন অভিভাবক আয়াত উল্লাহ। তার হাত ও পায়ে রশি বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতন চালানো হয়। ঘটনার পর থেকে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে পুরো এলাকায়। তোলপাড় হয় বিভিন্ন গণমাধ্যম। নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আয়াত উল্লাহ কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া ঘাটপাড়া এলাকার মাওলানা কবির আহমদের ছেলে। তিনি পেশায় চিত্রশিল্পী।

এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক জহিরুল হকসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ৮ জানুয়ারী কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন ভিকটিম আয়াত উল্লাহ। মামলার অন্যান্য আসামীরা হলো- দপ্তরী নুরুল হক, খরুলিয়া কেজি এন্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন, শিক্ষক ওবাইদুল হক, নুরুল হক, মিজানুর রহমান, আব্দুল আজিজ।

ঘটনার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মামলার এজাহারভুক্ত আসামী আব্দুল আজিজ নিজেই লাঠি দিয়ে আয়াত উল্লাহকে খুচা দিচ্ছে। গলায় রশি বেঁধে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাকে গ্রেফতার করা গেলে অনেক রহস্য বের হবে বলে দাবী স্থানীয়দের।

এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে, ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি জন্ম দিয়েছে খরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এনামুল হক ও সহকারী শিক্ষক নজিবুল্লাহ। এই দুই ব্যক্তির কারণে পুরো শিক্ষক সমাজের গায়ে কলঙ্ক লেগেছে। ঘটনার অন্যতম এই দুই নায়ককে বাদ দিয়ে মামলা হওয়ায় সর্বস্থরে নিন্দার ঝড় উঠে। তাদের গ্রেফতার করার দাবী সর্বমহলের। তবে, তারা মামলা থেকে বাদ পড়ার পেছনে রাজনৈতিক চাপ ও হুমকির কারণে বাদীর দূর্বল মানসিকতাকে দুষছেন স্থানীয়রা।

সবার আওয়াজ একটাই-মূল হুতা এনামুল হক ও নজিবুল্লাহকে আইনের আওতায় আনা হোক। অন্যতায় অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। সাহস পাবে অপরাধীরা। এখানে রাজনৈতিক পরিচয় বড় কথা নয়, অপরাধ বিবেচনাই মূখ্য।

অভিযোগ রয়েছে, দেশ বিদেশে আলোচিত খরুলিয়ার এ ঘটনাটে পুঁজি করে একটি মহল সাধারণ মানুষকে আসামী বানানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে পুলিশের নামও ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরনো স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে বেশ কিছু ব্যক্তি। বাদীকে বশে আনার চেষ্টা তদবিরও থেমে নেই বাদ পড়া হোতাদের। বাদী ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার দায়িত্বও নিয়েছে কয়েকজন নেতা।

স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেছে, ওই দিনের ঘটনাটি ভিডিও করে প্রথম প্রচার করেছে ঘাটপাড়ার মিজানুর রহমান প্রকাশ বুড়া মিজান।

মাস্টারপাড়ার মিজানুর রহমান প্রকাশ অভি মিজানও ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারাই প্রথম স্কুলের ফেইজে ভিডিও আপলোড দেয়। ভিডিও ফুটেজে যারা রয়েছে সবাইকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে-এমনটি ভাষ্য স্থানীয়দের।