‘বন্ধু’ না হয়েও তাঁরা খুঁজছেন অভিন্ন পথ

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১২ পিএম, শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ | ১৭০

নাটকীয় পরিবর্তনের আশা করছিলেন না কেউ-ই। সম্পর্কের বাঁধন এতটাই আলগা হয়ে পড়েছে যে একবারের চেষ্টায় তা আগের জায়গায় ফেরার নয়। হয়েছেও তাই। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার প্রথম বৈঠক দুই দেশের সম্পর্কের সুতায় একটা ‘টান’ দিয়েছে মাত্র। তবে কাছাকাছি যেতে পাড়ি দিতে হবে মাঝে থাকা ‘অনৈক্যের’ দূরত্ব।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাইডেন ও পুতিন একে অন্যের বন্ধু হবেন না, তবে তাঁরা সামনে চলার অভিন্ন পথ খুঁজবেন। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মধ্য দিয়ে হওয়া জেনেভা আলোচনা দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের দিশা হতে পারে। এ কথা কবুল করেছেন দুই নেতাই।

একদা ‘খুনি’ অভিহিত করা পুতিন সম্পর্কে বাইডেন জেনেভায় বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বললেন, তিনি একজন ‘যোগ্য প্রতিপক্ষ’। তাঁদের মধ্যকার অভিন্ন স্বার্থের দিকে নজর দেবেন তাঁরা। তবে এ কথাও মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বীকার করেন, দুজনের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে তা প্রতিশোধমূলক নয়। মোটা দাগে পুতিনের সঙ্গে তাঁর আলোচনাকে ‘ইতিবাচক’ বলে রায় দেন তিনি।

বাইডেনকে ‘একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিক’ অভিহিত করে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, তাঁর পূর্বসূরি সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে তিনি অনেকটাই ভিন্ন। দুজনের মধ্যকার তিন ঘণ্টার বেশি সময়ের আলোচনা ছিল ‘খুবই গঠনমূলক’। তিনি বলেন, কোনো বৈরী মনোভাব ছিল না। একে অন্যকে বোঝার আগ্রহ ছিল।

যদিও বৈঠক শেষে দুই নেতা একক সংবাদ সম্মেলন করেননি। তবে দুজনের পৃথক সংবাদ সম্মেলনের পর একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

জেনেভার লা গ্রেইনজ ভিলায় বাইডেন-পুতিন বৈঠকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে এবং প্রত্যাহার করা রাষ্ট্রদূতদের ফের একে অন্যের দেশের রাজধানীতে ফিরিয়ে আনায় ঐকমত্য হয়েছেন। ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া ‘মধ্যস্থতা’ করেছিল বলে অভিযোগ করে ওয়াশিংটন। এরপর গত মার্চে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নেয়। বন্দি বিনিময়েও কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে সম্মত হয়েছেন দুই নেতা।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার বলেন, ‘বাইডেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি সাধারণভাবে গঠনমূলক সম্পর্ক চাইবেন। তবে তিনি পুতিনকে বন্ধু ভাববেন না।’

বাইডেন ও পুতিন একে অন্যকে নিজ নিজ দেশে আমন্ত্রণ জানাননি। সাধারণত মুখোমুখি বৈঠকে এক পক্ষকে আরেক পক্ষ তাদের দেশ সফরের আমন্ত্রণ জানায়।

সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনার ব্যাপারে বৈঠকে দুই পক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে এবং এ ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করে যেতে রাজি বলেও জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, দুই দেশের কিছু বিষয় নিয়ে বাস্তবিক আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হবে কি না তা বলা কঠিন, তার পরও পারস্পরিক আস্থার বিষয়ে ক্ষীণ আশা আছে।

পুতিনের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন দৃঢ়তা নিয়ে কথা বললেও কণ্ঠে ছিল কিছুটা সম্প্রীতির সুর। বাইডেন বলেন, তিনি রাশিয়া কিংবা অন্য কারো বিরুদ্ধে নন। তিনি কেবল আমেরিকার জনগণের জন্য কাজ করছেন।

নির্ধারিত সময়ের আগেই আলোচনা শেষ হওয়ার ব্যাপারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁদের আলোচনার জন্য আর সময়ের প্রয়োজন হয়নি। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের আশা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

পরে যৌথ বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, ‘দুই দেশ প্রমাণ করে দিয়েছে যে এমনকি উত্তেজনার সময়েও তারা অভিন্ন লক্ষ্যে অগ্রগতি অর্জন করতে পারে।’ দুই দেশের সহযোগিতা নিজেদের মধ্যকার সংঘাত ও পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি কমাতে সহায়ক হবে বলেও মন্তব্য করেন তাঁরা।

তবে জেনেভা বৈঠকে বাইডেনের আরো ‘আক্রমণাত্মক’ হওয়া দরকার ছিল বলে রিপাবলিকানরা মনে করেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের ভাষ্য, পুতিনকে বাইডেন ‘সত্য কথা শোনাতে ছাড়েননি।’ সিনেটর বব মেনেনডেজ বলেন, ‘জেনেভা বৈঠক ক্রেমলিনের প্রতি ট্রাম্পের মেয়াদের ছাড়ের অবস্থান থেকে প্রস্থান।’

পুতিন এই নিয়ে তাঁর মেয়াদে পঞ্চম মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করলেন। জর্জ ডাব্লিউ বুশ ২০০১ সালে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেছিলেন, তিনি ‘তাঁর (পুতিন) মনের খোঁজ পেয়েছেন’। বারাক ওবামা তাঁর পূর্বসূরিদের মতো রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের আশা প্রকাশ করেছিলেন। তবে ট্রাম্প ছিলেন পুতিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ২০১৮ সালের ১৬ জুলাই ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প সাফাই গেয়ে বলেছিলেন, মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেনি। পুতিনও মুখ ফুটে বলেন, তিনি ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট দেখতে চান।

জেনেভার লা গ্রেইনজ ভিলায় বাইডেন-পুতিনের এই বৈঠক স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার ১৯৮৫ সালের রোনাল্ড রিগ্যান ও মিখাইল গর্বাচেভের বৈঠকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে এবারের সম্মেলনে ওই সময়ের মতো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র এবং প্রতিযোগিতামূলক মতাদর্শ নিয়ে উত্তেজনা কম। সূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।