সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ব্যবস্থাপক রেজাউল কবির

অবৈধ লেনদেনের নিরাপদ মাধ্যম মধুমতি ব্যাংক

ভোলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:০৯ এএম, বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১ | ৩০৮

ভোলার চরফ্যাশনের মধুমতি ব্যাংক শাখার সাবেক ব্যবস্থাপকের চাকুরি থেকে সাময়িক অব্যহতি দেয়ার প্রতিবাদে ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থের গড়মিলের অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক ব্যবস্থাপক মো.রেজাউল কবির।

গতকাল বুধবার(২০ জানুয়ারী)দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবের হল রুমে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাট করেন।

ভোলার চরফ্যাশন মধুমতি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক ও পরিচালক মো. রেজাউল কবির লিখিত বক্তব্যে বলেন তিনি তার নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ও স্ব-পদ ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি নিজেকে নির্দোশ বলে দাবী করেন।

তিনি বলেন, আমি ২৩ নভেম্বর ২০১৫ সাল থেকে চরফ্যাশনের মুধমতি ব্যাংক শাখায় সুনামের সহিত চাকুরী করেছি। এখন পর্যন্ত এই উপজেলার কোন গ্রাহক কিংবা ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ আমার কোন কাজে অসস্তষ্ট হয়নি। আমার দ্বারা এমন কোন কাজ হয়নি যা ব্যাংকের নিয়ম বহিঃভূত।

এমনকি এর আগেও ২৮ আগষ্ট ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমি ভোলা ও চরফ্যাশন শাখার ন্যাশনাল ব্যাংকে ক্যাশিয়ার ও ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানেও কাজের দীর্ঘ সময়টি আমার নামে কোন ধরনের খারাপ রেকর্ড কেউ দেখাতে পারেনি। আমার বাবাও ছিলেন ভোলা শাখার অগ্রনী ব্যাংক ম্যানেজার। যিসি আবু তাহের ম্যানেজার হিসেবে এক নামেই সবাই চিনে ও জানে। তার সততা ও আদর্শ নিয়েই আমিও ব্যাংকের চাকুরী জীবনে সুনামের সহিত কাজ করেছি।

কিন্তু দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, গত ১৪ জানুয়ারী ২০২১ ইং বৃহস্প্রতিবার হটাৎ করে ঢাকা থেকে মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড চরফ্যাশন শাখায় অডিট এন্ড ইন্সপেকশন টিম এসে গত ১৩ জানুয়ারী ২০২১ ইং পে-অর্ডার স্টক নিরিক্ষার সময় দেখতে পায় ব্যাংকের ভল্টে টাকা জমা না রেখে ১২টি পে-অর্ডার ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকের ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকার হিসেবে গড়মিল রয়েছে। অডিট টিম মনে করছেন এ টাকা আমি আত্মসাত করেছি। এই মর্মে তারা আমাকে বিভিন্ন ভাবে প্রেসার এবং নানা মুখী প্রশ্নের সম্মুখিন করেন। এক পর্যায়ে ব্যাংকের মধ্যেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে অডিট টিমকে বলে ব্যাংক থেকে আমি একটু নিচে নেমে আসি। নিচে নামতেই মাথা ঘুরে আমি মাটিতে লুটে পরি। স্থানীয় লোকজন আমাকে উদ্ধার করে চরফ্যাশনের আমার রুমে নিয়ে আসে। এরপর আমার অসুস্থতার খবরে ভোলা থেকে আমার পরিবারের লোকজন এসে আমাকে ভোলার বাসায় নিয়ে আসে এবং প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসায় ডাক্তার আমাকে ৩ দিনের ফুল বেড রেষ্টে থাকতে বলে। অমি শুধুমাত্র অসুস্থতার জন্য আমার মুঠোফোটটি বন্ধ করে আমি ডাক্তারের পরামর্শে রেষ্টে থাকি। পর দিন শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় ১৭ জানুয়ারী রোববার আমার পরিবারের লোকজন আমার পক্ষ থেকে একটি ছুটির আবেদন নিয়ে চরফ্যাশন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাশন শাখায় গিয়ে পৌছে। ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার ও অডিট টিম আমার পরিবারে লোকদেরকে তাদের ব্যস্ততার কথা বলে বিকেল ৫টায় আসতে বলে। এরপর আমার পরিবারের লোকজন বিকেল ৫টায় ব্যাংকে পৌছানোর সাথেই বাংকে কর্তৃপক্ষ পুলিশ দিয়ে আমার পরিবারের লোকদেরকে আটক করে চরফ্যাশন থানায় নিয়ে যায়।

টানা ২৪ ঘন্টা নানা নাটকিয়তার পর তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ না পেয়ে চরফ্যাশন থানা পুলিশ তাদেরকে ছেড়ে দেয়। ১৮ জানুয়ারী সোমাবার ডাক বিভাগের মাধ্যমে আমার হাতে একটি একটি চিঠি আসে। সেখানে দেখা যায় ব্যাংকিং হিসেবে নানা গড়মিলের কারণে আমাকে চাকুরি থেকে সাময়িক ভাবে অব্যাহতি দিয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ১২টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু এই অভিযোগ আদৌও সত্য নয়। আমার চাকুরি জীবনে এখন পর্যন্ত আমি কোথাও এক টাকাও গড়মিল করিনি। আমি মনেকরি এখানেও কোন ধরনের টাকা গরমিল হয়নি।

মধুমতি ব্যাংকের ভোলার চরফ্যাশন শাখার ব্যাবস্থাপকের পদে ২ বছর যাবৎ পদায়ন হলেও এ ব্যাংকের সকল কার্যক্রম স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই জাহিদুল ইসলাম শুভ ও তার ভাতিজা মধুমতি ব্যাংকের চরফ্যাশন শাখা অফিসার তরিকুল ইসলাম শরিফ নিয়ন্ত্রন করতো। অধিকাংশ সময়ই না বলে ব্যাংকের ক্যাশ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে কোথায় খরচ করতো বা কাকে দেয়া হতো তা জানতে চাইলে তারা চটে উঠতেন। এমনকি রাতের আধারে শত শত কোটি অবৈধ টাকা ব্যাংকের ভোল্টে রাখা হতো। তা জনতে চাওয়া হলে তার উপর প্রেশার করা হতো বলে অভিযোগ করে রেজাউল করিম।

রেজাউল কবির আরো বলেন, তার উপর আনিত ১২টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে আট কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার গড়মিলের অর্থেও ৬ কোটি ১০ লক্ষ টাকা জাহিদুল ইসলাম শুভ তার বিকাশ ব্যবসার জন্য সকালে নিয়ে যায় এবং ২ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা শরীফ স্থানীয় সংসদ আবদুল্লাহ আল ইসলামের ব্যবসার জন্য নিয়ে আর ফেরৎ দেননি বলে অভিযোগ করেন। তারা সব সময়ই এমন টাকা নিয়ে যেতেন আবার বিকেলে আথবা পরে দিয়ে যেতেন। তবে এবার আর ফেরত দিতে গড়িমসি করেন। এদিকে জাহিদুল ইসলাম ও শরীফ ব্যাংকের ভল্টের টাকা গ্রামীন এন্টারপ্রাইজ, চার দেয়াল ডেকোরেটর, কায়িফ এন্টারপ্রাইজ, মো. জাহিদুল ইসলাম, উপকূল ব্রিকস, মিলন

ট্রেডার্স, মা ট্রেডার্স, উপকূল কনস্ট্রাকশন,রুহি ফার্নিচারসহ একাধিক একাউন্টের মাধ্যমে প্রায় হাজারো কোটি টাকা অনৈতিক লেনদেন কওে, তারা এসব অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ করেন রেজাউল কবির। তারা মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাশন শাখাকে পারিবারিক অবৈধ লেনদেনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতেন।

উল্লেখ, ভোলার বাসিদ্ধা রেজাউল কবির মধুমতি ব্যাংক ভোলার চরফ্যাশন উপজেলা শাখায় ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে কর্মরত থাকার পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারী মধুমতি ব্যাংকের এক অডিট এন্ড ইন্সপেকশন টিম ১৩ জানুয়ারী ১২টি পে-অর্ডারের বিপরিতে তার বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা গড়মিলের অভিযোগ তোলেন। বলা হয় বিভিন্ন ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা হলেও তা পরে ভোল্টে জমা রাখেননি তিনি।

তবে রেজাউল কবির বলেন, কয়েক দিন আগেই ব্যাংক থেকে এ সকল টাকা নিয়ে যায় এমপির আত্মীয় স্বজনরা। তারা তা ফেরত দেননি। পরে জাহিদুল ইসলাম ৪৫ লক্ষ টাকার একটি চেক দিলেও তার একাউন্টে অর্থ না থাকায় তা ক্যাশ করা সম্বভ হয়নি। এরপর অডিট টিমকে ভল্টে টাকা ঠিক মতোই আছে এমনটি বুঝাতে তিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে ভল্ট থেকে সরে যাওয়ার টাকা স্বমনয় করেন।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন মধুমতি ব্যাংক শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. ইয়াছিন উদ্দিন সোহেলের সাথে যোযাযোগ করা হলে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের অজুহাতে কোন ধরনের কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়টি নিয়ে ভোলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের মামলা করেনি। তবে বিষয়টি একটি অভিযোগ হিসেবে চরফ্যাশন থানায় দেয়া হলে তদন্তের জন্য আমরা সেটি দুদক বরিশাল বরাবর পাঠিয়ে দেই।