রংপুরে নিভৃত পল্লীতে শহীদ মিনার স্থাপন

রুবেল ইসলাম,রংপুর
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ পিএম, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২০ | ২৭৯

রংপুরে নিভৃত পল্লীতে নিজ ব্যক্তি উদ্যোগে ও সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভাষা শহীদের প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার গড়ে তুলে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মোশারফ হোসেন শামীম নামক একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ।

৫২’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যেন নিভৃত পল্লীতে পৌছে এবং মায়ের ভাষায় কথা বলার যে অধিকার তা যেন অটুট থাকে তারি বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য এই উদ্যোগ। নিভৃত পল্লীতে প্রতিষ্ঠিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আনন্দে উদযাপিত আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নে জোতবাজ নামক নিভৃত পল্লীতে শুক্রবার (২১শে ফেব্রুয়ারি)সকালে এই শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম,ভীম শহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুল্লাহ আল গালিব,জোতবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপাল চন্দ্রসহ প্রমূখ।

এদেশের স্বাধীনতা ও ভাষা শহীদদের ৬৮ বছর পর নিজ গ্রামে ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে পেরে শিক্ষার্থীদের মনে উল্লাষের ঢেউ বইছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে- শিক্ষার্থীরা বলেন এই আনন্দ আমরা মুখের ভাষায় প্রকাশ করতে পাবো না। আজকে আমরাও শহরের মতো আগামী বছর প্রভাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।

ভীম শহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন-অত্র এলাকায় মানুষদের ভাষার প্রতি সম্মান ও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সাড়া জাগানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ আমরা এগিয়ে এসেছি। কারণ এই প্রথম এলাকায় একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলো । আমার নিজের প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় এই এলাকার শিক্ষার্থীরা জানেন না-শহীদ মিনার দেখতে কেমন?শুধুমাত্র ছবিতে তারা শহীদ মিনার দেখছে! কিন্তু বাস্তবে তাদের দেখার সুযোগ হয় নি! আজকে এই এলাকার মধ্যে দৃশ্যমান শহীদ মিনার হওয়ায় তাদের মধ্যে আনন্দের উৎচ্ছাস বইছে।

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম বলেন- আমরা আশা করি যদি শামীম ভাইয়ের মতো অনেকে স্বেচ্ছায় উদ্যোগ নেয় তাহলে আমাদের এই এলাকা কিংবা ইউনিয়নের নানামূখী উন্নয়ন করা সম্ভব।

আগামীতে আমাদের ইউনিয়নের প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করার উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে আমাদের ভাষার জন্য যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের সর্ম্পকে জানতে পারবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন-অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার ফলে নিজ জন্মভূমিতে মোশারফ হোসেন শামীম ভাই শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন এতে যারা সাহায্য-সহযোগিতা করতেছেন তাদের আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।আপানাদের কাজের সার্থকতা কতটুকু তা আপনারা এই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিকে চেয়ে বুঝতে পারছেন। আজ তাদের মনে কত আনন্দ,তাদের মাতৃভাষা তাদের কাছে কত প্রিয় তা তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন। এ সময় তিনি আগামী ডিসেম্বর মাসের পূর্বেই ভিমশহর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে শহীদ মিনার নির্মাণের আশ^াস প্রদান করেন।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মোশারফ হোসেন শামীম এর সাথে কথা হলে তিনি জানান- শহীদ মিনার যে শুধু ভাষা শহীদদের স্মরণ করিয়ে দেয় তা নয় বরং একটি স্কুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অভাবনীয় ভূমিকা রাখে।যার দৃশ্যমান শুধু সৌন্দর্য নয় যাহা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের স্মরণ করে দেবে এ ভাষার গুরুত্ব কেমন? এ সময় তিনি দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণের আহব্বান জানান। কারণ এই শহীদ মিনার দেখেই যেন শিক্ষার্থীরা মনে করেন তাদের অতীত প্রজন্ম ভাষার জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেশপ্রেমের মহত্ব ও গুরুত্ব কত দিয়েছেন।

একুশ মানে চেতনা,একুশ মানে প্রেরণা,একুশ মানে বাক স্বাধীনতার বহিঃপ্রকাশ। বিশে^র মধ্যে প্রথম বাক স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী ভাষা শহীদের প্রতিবছর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাঙ্গালী জাতি।