আজ ১০শে ডিসেম্বর ঘাটাইল হানাদার মুক্ত দিবস

ঘাটাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৩৬৬
আজ ১০ ডিসেম্বর। টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এদিনেই টাঙ্গাইলের ঘাটাইল অঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়।১৯৭১ সালের মহান স্বধীনতা যুদ্ধের প্রায় ৮ মাস পাকহানাদার বাহিনী  কর্তৃক ঘাটাইলবাসী হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের পর ১০ ডিসেম্বর মুক্তির  স্বাদ লাভ করে।
 
পাকিস্তানের দীর্ঘ  ২৪ বৎসরের দুঃশাসন, বঞ্চনা, বৈষম্য, অত্যাচার, নির্যাতনের ফলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিশ্বের বুকে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামের স্বাধীন রাষ্টের।
 
২৫ মার্চ ৭১`র কালো রাতে পাকহানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তার ধারাবাহিকতা সারা দেশে চালাতে থাকে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঘাটাইলের বীর জনতা দেশের অবস্থা অনুধাবন করতে পেরে সংগঠিত হয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে।
 
 দীর্ঘ ৯মাসের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঘাটাইলের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে কাদেরিয়া বাহিনী বিশেষ অবদান রাখেন এই এলাকায়। কাদেরিয়া বাহিনীর নেতৃত্বে যমুনা নদীতে পাকিস্থানি যুদ্ধ জাহাজ ধবংস করা হয়।
 
এ সময় মুক্তিসেনারা ২১ কোটি টাকার গোলা বারুদ ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কব্জা করে মুক্তিযুদ্ধের নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী গঠিত হওয়ার পর ঘাটাইলের মুক্তিযোদ্ধারা কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে একীভূত হয়ে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে দুর্বার লড়াই গড়ে তুলে।
 
মাকড়াই যুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর হাতে গুলি লাগলে তিনি মারাত্মক আহত হন। ৭ ডিসেম্বর ভুঞাপুর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয় ৮ ডিসেম্বর রাত্রেই ঘাটাইলের প্রতিটি পাকবাহিনীর অবস্থানে এক যোগে আক্রমণ করা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে। এই মর্মে প্রতিটি কোম্পানি ও কোম্পানি কমান্ডারদের আক্রমণ স্থল নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
 
এই লক্ষ্যে ৫ হাজার মক্তিযোদ্ধাকে ৩০টি কোম্পানিতে বিভক্ত করে ৫টি মূল দলে ভাগ করে আক্রমণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। ৮ ডিসেম্বর রাত ১১ টায় হাবিবুল হক বেনুসহ আরও একটি কোম্পানি রতনপুর অবস্থান নেয়। গোলাপের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে বানিয়া পাড়া সেতুর পশ্চিম পাশে তেলেঙ্গাপাড়া গ্রামে অবস্থান নেয়।
 
৯ ডিসেম্বর কাদের সিদ্দিকীর নিদের্শ অনুযায়ী কালিদাস পাড়া, গুণগ্রাম, ঘাটাইল সদর ও বানিয়া পাড়া সেতু একযোগে আক্রমণ করা হবে। সে পকিল্পনা অনুযায়ী ভোর ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত চতুর্দিক থেকে বৃষ্টির মত গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ঘাটাইল থানা আক্রমণ করেন মুক্তিবাহিনী।
 
পরে মেজর হাবিব ভোরে বানিয়া পাড়া সেতু, মেজর মোস্তফা কালিদাস পাড়া সেতু দখল করে ঘাটাইল থানার দিকে অগ্রসর হন। কাদের সিদ্দিকী নিজেই পশ্চিম দিক থেকে আক্রমণ করেন। এ যুদ্ধে ৫০ জন পাকহানাদার নিহত ও ১৫০ জন বন্দি হয়। এই দিন ঘাটাইল এর পাহাড়ি অঞ্চল পাক হানাদার মুক্ত হয়।