‘নীতি আদর্শ নিয়ে চলতে হবে’-প্রধানমন্ত্রী

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩০ পিএম, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০ | ১৪৯

শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই সংগঠন। এই সংগঠন করতে হলে নীতি আর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। সংগঠনকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব বেরিয়ে আসে।’

এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার ডকুমেন্টরি যেগুলো প্রকাশ করছে সরকার, সেগুলো পড়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এসব থেকে ইতিহাসের অজানা অনেক অধ্যায় জানা যাবে।’

বাংলাদেশের প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান স্মরণ করে সংগঠনটি গড়ে তোলার প্রেক্ষাপটও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রলীগ এমন একসময়ে জন্মলাভ করেছে, যখন বাঙালির ভাষার অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। পাকিস্তানি সেই শোষণ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন সংগ্রাম শুরু করেন। বাঙালির মাতৃভাষার সংগ্রাম শুরু করার জন্য ছাত্রলীগ গড়ে তোলেন। আরো কয়েকটি সংগঠনকে নিয়ে এই আন্দোলন শুরু করেন। ১১মার্চ ১৯৪৮ সালে যে আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল। তখন রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন করতে গিয়েই বঙ্গবন্ধু কারাবন্দি হন।

‘নিজের জীবনে কী পাবেন, কী পাবেন না, তা নিয়ে কোনো চিন্তা ছিল না তার। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তার সব সংগ্রাম। স্বাধীনতা অর্জন করাটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল। যেজন্য কারাগারই হয়ে উঠেছিল তার বাড়িঘর।”

‘স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন ধাপে বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগকে দিয়ে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামকে জাগ্রত করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সমগ্র বাংলাদেশে নিউক্লিয়াস ফর্ম করে মানুষের মাঝে স্বাধীনতার চেতনাকে উদ্বূদ্ধ করতে একটা উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন। সংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি বাঙালির মুক্তির অধিকার অর্থাৎ তারা যে নির্যাতিত হয়েছে সেই চেতনাটা বাঙালিকে জানানো এবং জাগ্রত করা। এই কাজটি জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। এর দায়িত্ব তিনি ছাত্রলীগকে দিতেন। জয় বাংলা শ্লোগান মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে ছাত্রলীগকে বলতেন, এটা জনগণের কাছে নিয়ে যাও।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগারে থাকা অবস্থায় জাতির পিতা কারাগারে বসে যে নির্দেশ দিতেন, মা (শেখ ফজিলাতুন্নেসা) তা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জানাতেন। সেইভাবেই কিন্তু আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল।’

‘বিভিন্ন সময়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিপথে নিতে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়া তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কাগজ কলম আর খালেদা জিয়া অস্ত্র তুলে দিয়েছিল।’

তিনি বলেন, “একটা সুস্থ রাজনীতিক ধারাকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে গেছে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেছে।

‘শিক্ষার্থীদের যদি বিপথে নেয়া হয়, তাদেরকে রাজনীতির উচ্চবিলাস চরিতার্থ করার কাজ ব্যবহার করা হয়, তাহলে তারা নেতৃত্ব দিতে পারবে না। আদর্শ ও সততা ছাড়া কোনো নেতৃত্ব গড়ে উঠতে পারে না। দেশের ও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। সফলতা দেখাতে পারে না।”

এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে পায়রা উড়িয়ে, পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক প্রমুখ।

বাংলা, বাঙালির স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ’৫২’র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪’র প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৫৮’র আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬’র ৬ দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা করে।

এরপর ’৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা, ’৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ’৭১-এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পরাধীন বাংলায় লাল সবুজের পতাকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।