দেড় বছর অফিসে আসেন না ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর


ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর কৃষিবিদ এম এ খালিদ প্রায় দেড় বছর বেশি সময় কর্মস্থলে আসেন না। আর অফিস প্রধান কর্মস্থলে না আসার কারণে ওই অফিসের ২৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারীও অফিসে অনিয়মিত। গতকাল বৃহস্পতিবার অফিসে মাত্র ৭ জন কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। অফিসে কোন কর্মকর্তা ছিলেন না। এমন চিত্র শুধু একদিনের নয়, প্রতিদিনের।
যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ক্যাশিয়ার আমজাদ হোসেন জানান, অফিসের এই বেহাল দশা সম্পর্কে বলেন, কর্মকর্তা না থাকলে কি কর্মচারীরা থাকেন ? তিনি স্বীকার করেন ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর অফিসে আসেন না। তিনি চুয়াডাঙ্গা বা ঝিনাইদহ শহরের আরাপপুর এলাকায় এসে ফোন দিলে হাজিরা খাতা নিয়ে যান। তারপর একবারে সাক্ষর করেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ডেপুটি কো-অডিনেটর কৃষিবিদ এম এ খালিদ ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রয়ারি দায়িত্ব গ্রহন করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি অফিস করেন না। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের এক নারী প্রশিক্ষকের সাথে যৌন কেলেংকারীর ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে তিনি অফিসে আসা বন্ধ করে দেন। গত বছর ছুটি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের এক নারী প্রশিক্ষককে নিয়ে যান ঈশ্বরদীর নিজ বাড়িতে।
সেখানেই তার উপর যৌন নিপীড়ন চালান ডেপুটি কো-অডিনেটর এম এ খালিদ। পরবর্তীতে ওই নারী গর্ভবর্তী হয়ে পড়েন। এ নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বিবাদের খবরটি ডিপার্টমেন্টে হৈ চৈ ফেলে দেয়। গাইবান্ধা যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের আরেক ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর জাকাত আলী এক লিখিত পত্রে ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর খালিদের নারী কেলেংকারী ও আর্থিক ক্ষতি সাধনের বিষয়টি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচলককে অবহিত করেন।
ওই সময় ডেপুটি কো-অডিনেটর এম এ খালিদ ঝিনাইদহে বদলী হলেও থাকতেন গাইবান্ধার ডরমেটরি ভবনে। ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল ৩৪.০১.৩২০০.০০০.১৮.৪২.২০০৫ নং স্মারকে দেওয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে গাইবান্ধায় একটানা ১২ বছর থাকার সুবাদে এক ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ডেপুটি কো-অডিনেটর এম এ খালিদ। তাছাড়া ঝিনাইদহের ওই নারী প্রশিক্ষকের সাথেতও তিনি মোবাইলে ম্যাসেজ প্রদান ও অশ্লিল আলাপ আলোচনার রেকর্ড খালিদের স্ত্রী জানতে পারেন।
এ নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য কলহ চলছে। এদিকে ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ২১ জন কর্মকর্তা কর্মচারী মহাপরিচালক বরাবর ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর ২০৩ নং স্মারকে অফিসে না আসার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অফিসে কোন কর্মকর্তা না থাকায় অফিসের সেডগুলোতে সরকারী মালামাল ও বিদ্যুৎ ব্যাবহার করে মুরগী পালন করছেন দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও কর্মচারী জসিম উদ্দীন।
ব্যক্তিগত মুরগী পালনের খরচ অফিস থেকেই বহন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ খবরের সত্যতা স্বীকার করেন ক্যাশিয়ার আমজাদ হোসন। তিনি বলেন ওই সেডের বিদ্যুৎ বিল অফিস থেকেই বহন করা হচ্ছে। এক টানা অফিসে অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতে ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর কৃষিবিদ এম এ খালিদকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচলক শাহিদুল ইসলাম বৃহস্পতিবার জানান, ডেপুটি কো-অডিনেটর কৃষিবিদ এম এ খালিদ দীর্ঘদিন ধরেই অফিসে আসেন না। অফিসে না আসার কারণে যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রটিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার থেকে ট্রেনিং শুরুর কথা, কিন্তু যুবকদের ট্রেনিং শুরু হয়নি। তিনি আরো বলেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিক মতো অফিসই করেন না। বিষয়টি মহাপরিচালকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।