ভারতকে একদিন আগেই জানানো হয়েছিল, শেখ হাসিনার সময় শেষ

আলোকিতপ্রজন্ম ডেক
প্রকাশিত: ১০:০৪ এএম, শুক্রবার, ৯ আগস্ট ২০২৪ | ৩৭২
ফাইল ছবি

বাংলাদেশে অস্থিরতা কমাতে গত রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক ডেকেছিলেন শেখ হাসিনা। তখনো তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার সময় ফুরানোর বিষয়টি মানতে নারাজ ছিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যে শেখ হাসিনার পতন ঘটবে—খুব কম লোকই এটা অনুমান করতে পেরেছিলেন। শেষ পর্যন্ত শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কথা না শুনলেও পরিবারের ঘনিষ্ঠজনদের পরামর্শে তিনি পালিয়ে যেতে রাজি হয়েছিলেন। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ বিবিসিকে এমন কথা বলেছেন।

বাসভবন গণভবনে জনতার পৌঁছানো ঠেকাতে পারবেন না। সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময় তা সম্ভব হতে পারে।

এ পর্যায়ে সামরিক প্রধানরা শেখ হাসিনাকে বোঝানোর জন্য তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন। পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর প্রধানরা তখন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি তার বড় বোনকে চলে যেতে রাজি করাতে পারেন কিনা সে কথা বলেন তারা। কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে অন্য একটি কক্ষে আলোচনা করেছিলেন। তারা তাকে শেখ হাসিনার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে বলেছিলেন। শেখ রেহানা তখন তার বড় বোনের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় ছিলেন।

তারপর বিদেশে থাকা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ফোনে তার সঙ্গে কথা বলেন। তারা তাকে চলে যেতে বলেন। পারিবারিক এ আলোচনার পুরোটা সময় সেনাপ্রধান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বৈবাহিক সূত্রে শেখ হাসিনার আত্মীয়।

সজীব ওয়াজেদ গত মঙ্গলবার বিবিসিকে বলেন, ‘আমার মা মোটেও দেশ ছেড়ে যেতে চাননি। আমাদের তাকে রাজি করাতে হয়েছিল।’

সূত্র জানায়, সোমবার সকালে শেখ হাসিনা নিরাপদ আশ্রয়ের অনুরোধ জানাতে দিল্লিতে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভারতের দিক থেকে তাকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা কখন পদত্যাগপত্রে সই করেছেন, কখন সামরিক হেলিকপ্টারে উঠেছেন, তা কেবল স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট ও সেনা সদরের কিছু ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানতেন। পুরো ব্যাপারটা বেশ গোপনে করা হয়েছিল।’

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়, যাতে শেখ হাসিনার গতিবিধির কোনো খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে না পড়ে। তিনি চলে যাওয়ার পরই ইন্টারনেট আবার চালু করা হয়েছিল।

সজীব ওয়াজেদ বলেন, ‘আমার মা হেলিকপ্টারে উঠতে চাননি। আমি ফোন করেছিলাম। আমি আমার মাকে রাজি করাচ্ছিলাম। আমার খালাকে বলেছিলাম, তাকে চলে যেতে হবে।’

সজীব ওয়াজেদ আরো বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তারা তা করেন। তারা গণভবন থেকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি অপেক্ষমাণ সি-১৩০ হারকিউলিসে ওঠেন।’

ভারতের স্থানীয় সময় সোমবার বেলা প্রায় ১টা ৩০ মিনিটে হাসিনা, তার বোন রেহানা ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানকে হেলিকপ্টার থেকে উড়োজাহাজে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যেটি তাদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছিল।

সুত্র: বণিক বার্তা