ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে লিখিত

পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও, একই প্রশ্নে পুনরায় ব্যর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৪২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২ | ১৮৮২

টাঙ্গাইলে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে লিখিত পরীক্ষায় দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষায় সকল প্রার্থীর চেয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পান পরীক্ষার্থী আদ্রিতা রহমান। তিনি টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার লায়লা খানমের মেয়ে । 

অভিযোগ উঠেছে আদ্রিতা রহমানের মা টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়না খানমের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা পরীক্ষা কেন্দ্র  লিখিত পরীক্ষা হওয়ায় কেন্দ্র সচিব, সহকারী কেন্দ্র সচিব এবং প্রার্থীর কক্ষের পরিদর্শকদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় অস্বাভাবিক নাম্বার প্রাপ্ত হন।
পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর ওই প্রাপ্ত নম্বর নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেন। স্থানীয় জনগণের সন্দেহের প্রেক্ষিতে ও অধিকতর যাচাইয়ের স্বার্থে একই প্রশ্নে পুনরায় আদ্রিতার লিখিত পরীক্ষা নেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন। তবে এবার লিখিত পরীক্ষায় তেমন কোন উত্তরই দিতে পারেননি এই পরীক্ষার্থী।

লিখিত পরীক্ষায় কথিত অসদুপায় অবলম্বনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৭ জুলাই টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক এর কার্যালয় থেকে লিখিত ভাবে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগকে অবহিত করা হয়। 

বিষয়টির প্রকৃত অবস্থা উদঘাটন এবং ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পুলিশের বিশেষ ইউনিট সিআইডির সহায়তা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড.মো. আতাউল গনি। 

চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া আদ্রিতা রহমান যার রোল নাম্বার ২০০১১৯৮ তিন ধাপের পরীক্ষায় ৬৯ নম্বর পাওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করেন। প্রার্থীর মেধা আচার আচরণের সাথে ফলাফলের সামঞ্জস্য না থাকায় নিয়োগ কমিটি সদস্যদের অবহিত করেন এবং অভিযোগ করেন আদ্রিতা রহমান, টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানমের মেয়ে। আরও অভিযোগ আছে আদ্রিতা রহমানের মা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা পরীক্ষা কেন্দ্র “বিবেক আনন্দ হাই স্কুল এন্ড কলেজ  টাঙ্গাইল” এ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় কেন্দ্র সচিব, সহকারী কেন্দ্র সচিব এবং প্রার্থীর কক্ষের পরিদর্শকদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় অস্বাভাবিক নাম্বার প্রাপ্ত হন। অধিকতর যাচাইয়ের স্বার্থে প্রার্থীকে উপ পরিচালক, স্থানীয় সরকার তার অফিস কক্ষে গত ২১ জুলাই একই প্রশ্নে তার লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করেন। সেখানে প্রার্থীর এলোমেলো আচরণ করেন এবং তেমন কিছুই উত্তর দিতে সক্ষম হয়নি। এজন্য লিখিত পরীক্ষায় প্রার্থীর অসদুপায় অবলম্বনের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।

এমতাবস্থায় টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক ড.মো. আতাউল গনি মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে পাঠানো চিঠির অনুলিপি প্রদান করেন সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ,বিভাগীয় কমিশনার,অতিরিক্ত সচিব মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব।

বিবেকানন্দ হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে বলেন,কেন্দ্রে ১১৬০ পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করেন। এ কেন্দ্রে আদ্রিতা রহমান নামের কোন পরীক্ষার্থী ছিল কিনা সেটি আমার জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরীক্ষা গ্রহণের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে সকল কার্যক্রম পরিচালনায় তিনি সহায়তা করেন। তবে কেন্দ্র সচিব, সহকারি কেন্দ্র সচিব বলে কোন দায়িত্ব ছিলনা। দুই সদস্য বিশিষ্ট পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির গঠণ করা হয় বলে জানান তিনি। ওই কমিটির সদস্যরা হলেন- আবু দাউদ ও আলহাজ¦ ফজলুর রহমান। এছাড়াও পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন ৪০জন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম বলেন, আমার মেয়ে আদ্রিতা রহমান ইউনিয়ন সচিব পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল বিবেকানন্দ হাই স্কুল এন্ড কলেজ। পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা প্রশাসন। সেখানে আমার কোন প্রভাব ছিলনা।

উল্লেখ্য, গত ১৬ জুলাই লিখিত পরীক্ষায় এবং ১৭ জুলাই ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ সচিব পদে ১২ জন প্রার্থী চূড়ান্ত ভাবে উত্তীর্ণ হয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইল বিবেকানন্দ স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরীক্ষা দেন ২০০১১৯৮ রোল নম্বরধারী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়ে আদ্রিতা রহমান। এবং সকল পরীক্ষার্থীর চেয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পরীক্ষায় উওীর্ণ হন।