শোকের মাসে সরকারি কর্মকর্তার নেতৃত্বে শিক্ষকদের আনন্দ ভ্রমন

মির্জাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:২৩ পিএম, সোমবার, ১৪ আগস্ট ২০১৭ | ৫৫৪

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে দুটি ক্লাস্টারের প্রধান শিক্ষকরা শোকের মাসে আনন্দ ভ্রমনে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সোমাবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নেতৃতে এ উপজেলার গোড়াই ও পাঁচগাও ক্লাস্টারের ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা কিশোরগঞ্জ এলাকায় ভ্রমনে যান বলে জানা গেছে। এ নিয়ে মির্জাপুরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


জানা গেছে, উপজেলার পাঁচগাও ক্লাস্টারের ২১টি এবং গোড়াই ক্লাস্টারের ২৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৬শ সমাপনী পরীক্ষার্থীর মডেল টেস্ট পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ টাকা করে প্রায় ৮০ হাজার টাকা পরীক্ষার ফি বাবদ উত্তোলন করা হয়।

প্রশ্ন পত্র ও খাতা বাবাদ প্রায় ৪২ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে বাকি টাকা দিয়ে ওই দুই ক্লাস্টারের প্রধান শিক্ষকরা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে সোমবার সকালে কিশোরগঞ্জ এলাকায় ভ্রমনে যান।

শোকের মাসে ভ্রমনে যাওয়ায় উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যিালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।


গোড়াই নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাছির মিয়া ও গোড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আজহারুল ইসলাম বলেন, দুই ক্লাস্টারের ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষার্থী প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫টি মডেল টেস্ট পরীক্ষার কথা বলে ৫০ টাকা করে প্রায় ৮০ হাজার টাকা তুলা হয়েছে।

এরমধ্যে প্রায় ৪২ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে বাকি টাকা দিয়ে ওই দুই ক্লাস্টারের প্রধান শিক্ষকরা আনন্দ ভ্রমনে গেছেন। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার গোড়াই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের এক সভায় ভ্রমনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে তারা জানান।


এ বিষয়ে ওই দুই ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার জান্নাত আরা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মডেল টেস্ট নয়, মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলা হয়েছে।

শোকের মাসে আনন্দ ভ্রমনে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষকরা ছুটি পাননা। সোমাবার ছুটি পাওয়ায় তারা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ভ্রমনে গেছেন।


উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খলিলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের টাকায় এ ভ্রমনের আয়োজন করা হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

তাছাড়া ভ্রমনের জন্য আমার কাছ থেকেও ৬শ টাকা চাঁদা নেয়া হয়েছে। শোকের মাসে আনন্দ ভ্রমন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা কোন আনন্দ ভ্রমন না। আমরা একটু অবসর পেয়েছি বিধায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাড়িসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করি।


উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহিনুর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, ওই দুই ক্লাস্টারের সমাপনী পরীক্ষর্র্থীদের কাছ থেকে ৫০ টাকা করে তুলা হয়েছে বলে তারা শুনেছেন।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়গুলো আমার জানা নেই।


উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।