প্রতারণা করতেই পল্লী চিকিৎসক পিতা-পুত্র

স্টার্ফ রিপোটার
প্রকাশিত: ০৫:৫৩ পিএম, শনিবার, ১০ এপ্রিল ২০২১ | ৬৭৬

পিতা পুত্র পল্লী চিকিৎসক। কোন ডাক্তারি রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই নামের আগে তারা দুজনেই ডাক্তার লিখেন। শুধু তাই নয়, নিজেদের নামীয় স্ব স্ব খাতায় লিখেন চিকিৎসা পত্র এবং জটিল রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক ঔষধ। তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের দোকানে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ফোড়া, গেজ অপারেশন ও কাটা ছেরার সেলাই করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দামে ঔষধ বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।

এভাবে প্রতারণা করে মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পাকুল্যা গ্রামের মো. তোফাজ্জল হোসেন। তাকে সহযোগিতা করেন তার ছেলে মো. তাইবুর রহমান। তিনি নামের আগে ডাক্তার লাগিয়ে চিকিৎসা পত্র দিচ্ছেন। এতে ঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ মানুষ।

এলাকাবাসী জানান, পল্লী চিকিৎসকের সনদ নিয়ে মো. তোফাজ্জল হোসেন পাকুল্লা বাজারে তোফাজ্জল মেডিকেল হল নামে ঔষধের দোকান করেছেন। কিন্তু নিজের নামের আগে ডাক্তার লিখে ও পদবি ব্যবহার করে চিকিৎসা পত্রও বানিয়েছেন। সেখানে রোগির নামসহ প্রকৃত ডাক্তারের মতো ৭দিন, ১৫ দিন ও একমাসের এন্টিবায়োটিকসহ নানা ঔষধ লিখে দেন। আবার তাদের দোকান থেকেই ওইসব ঔষধ বেশি দামে বিক্রি করা হয়। রোগিদের কাটা অংশ সেলাই, পরীক্ষা নিরিক্ষা ছাড়াই ফোড়া ও গেজ অপারেশন করার অভিযোগও রয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাজারে গিয়ে তার দোকানের বাইরে তোফাজ্জল মেডিকেল হল নামে কোন সাইন বোর্ড চোখে পড়েনি। তবে তার ব্যবস্থা পত্রে তার দোকানের নাম লেখা রয়েছে। তাদের দোকানে এক কক্ষের ভিতর দুটি ভাগ করা। এক পাশে তারা দুজনেই রোগি দেখেন ও সেলফে বিভিন্ন কোম্পানীর ঔষধ এবং আরেক পাশে হাসপাতালের মতো বিছানা। সেখানে রোগিদের ইনজেকশন ও সেলাইন দেওয়া হয়। পাশেই রাখা দুটি পেসক্রিপশনের দিকে নজর পরলো। রুনা ও লিমা নামের দুই নারীকে তিনি চিকিৎসা পত্র লিখে দিয়েছেন তার ছেলে মো. তাইবুর রহমান। রোগির সমস্যা লিখা না হলেও রুনাকে ১ মাসের ৫ টি ঔষধ ও লিমাকে এন্টিবায়োটিকসহ সাত দিনের ৪ টি ঔষধ লিখে দিয়েছেন। তবে রুনা ও লিমার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মো. তোফাজ্জল হোসেনের প্যাডে লেখা ‘ডা. মো. তোফাজ্জল হোসেন, অভিজ্ঞ পল্লী চিকিৎসক এল.এম এ এফ-ঢাকা, পাকুল্যা বাজার, টাঙ্গাইল ও মো. তাইবুর রহমানের প্যাডে লেখা ‘ডা. মো. তাইবুর রহমান, ফার্মাসিষ্ট, সিএইচডাবিøউ টাঙ্গাইল, ডায়াবেটিক রোগ নিরাময়ে অভিজ্ঞ পাকুল্যা বাজার টাঙ্গাইল।’ তোফাজ্জল মেডিকেলে জোয়াহের আলী এক বৃদ্ধ লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর শরীর খুব দুর্বল। তাই ডাক্তার দেখে স্যালাইন পুশ করছে। স্যালাইনের পুশের আগে আমার স্ত্রীকে কোন পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয়নি। অনেকের কাছে শুনেছি তোফাজ্জল ডাক্তার ঔষধের দাম বেশি রাখে।’

আলম মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করতে ওরা বাপ বেটা মিলে নামের আগে ডাক্তার লাগিয়েছে। ওরা ঔষধের দামও অনেক বেশি রাখেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

হাসান মিয়া বলেন, ‘আমাকে এর আগে তোফাজ্জল ডাক্তার সাড়ে ৫০০ টাকার ঔষধ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই ঔষধ অন্য দোকান থেকে ৪০০ টাকায় এনেছিলাম। তার দীর্ঘদিন যাবত পেসক্রিপশন করে ঔষধ বিক্রি করে থাকে। তাদের ডাক্তার বলে ডাক না দিলে মনক্ষুন্ন হয়। তারা যদি আসলেও ডাক্তার না হয়ে থাকেন তাহলে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’

রফিকুল ইসলাম স্বপন নামের এক পল্লী চিকিৎসক বলেন, ‘আমাদের নামের আগে ডাক্তার লেখা, চিকিৎসা পত্রে এন্টিবায়োটিক ঔষধ লেখার কোন নিয়ন নাই। এ ছাড়াও অপারেশন ও অধিক দামে ঔষধ বিক্রি করাও ঠিক হয়নি। কেউ যদি করে থাকে তাহলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. তাইবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

অভিযুক্ত তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘২১ বছর যাবত এখানে ডাক্তারি করছি। এতোদিন কেউ কিছুই বলেনি। প্রেসক্রিপশন ছাড়া এন্টিবায়োটিক ঔষধ বিক্রির নিয়ম নেই। সেই জন্য নিজেরাই প্রেসক্রিপশন করে নেই। নামে আগে ডাক্তার লিখা ও প্রেসক্রিপশন করা অনুমতি আমাকে জেলা পল্লী চিকিৎসক কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিয়েছেন।’

টাঙ্গাইল জেলা পল্লী চিকিৎসক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, ‘নামের আগে ডাক্তার লেখা ও চিকিৎসা পত্র দেওয়ার অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। তোফাজ্জল হোসেন ও তার ছেলে তাইবুর রহমান যা করছেন তা অপরাধ। তারা ঠিক করছেন না। তাদের কার্যক্রম অনুযায়ি তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাব উদ্দিন খান বলেন, ‘এল.এম.এ.এফ যারা ডিগ্রী নিয়েছেন তারা হাইকোর্টে রিট করে রেখেছেন। তাদের মামলা চলমান রয়েছেন। ফার্মাসিষ্ট যারা তারা ডাক্তার লিখতে পারেন না। খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’