নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন: প্রধান আসামী দেলওয়ার এবং সামি বাদল গ্রেফতার

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২৬ পিএম, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০ | ৪৯১

নোয়াখালীতে এক নারীকে (৩২) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগে বেগমগঞ্জ থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন নির্যাতিতা নারী। গত রোববার মধ্যরাতে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। উভয় মামলায় নয় জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

পুলিশ গতকালই আবদুর রহিম ও রহমত উল্যাহ নামে দুই জনকে আটক করে। আজ র‌্যাব-১১ ঢাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি বাদল এবং দেলওয়ার বাহিনীর প্রধান দেলওয়ারকে গ্রেফতার করে। 

পুলিশ জানায়, একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই তারা বিষয়টি জানতে পারেন এবং তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ নেন। পুলিশ নির্যাতিতা নারীকে খুঁজে বের করার পর তার বক্তব্য রেকর্ড করেছে এবং থানায় মামলা দায়ের করতে সহযোগিতা করেছে।

গতকাল রোববার নির্যাতিতা নারীর দেয়া বক্তব্যের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তার স্বামীর সঙ্গে বেশ কয়েক বছর বনিবনা না থাকায় তিনি বাপের বাড়িতে থাকতেন। তবে বছর দুই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক আবার ভালো যাচ্ছিল এবং স্বামী তার বাবার বাড়িতে যাতায়াত করেন। গত ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়ও তার স্বামী আসেন। এর মধ্যে হঠাৎ একই এলাকার দেলওয়ার বাহিনীর ১৪-১৫ জনের একদল সন্ত্রাসী ওই নারীকে ‘নষ্টা’ আখ্যা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। এসময় তাদের একজন বিবস্ত্র অবস্থায় নির্যাতনের পুরো ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করে। 

তিনি বলেন, এমন ঘটনা ঘটিয়ে রাতে তারা চলে যায়। যাওয়ার সময় তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ারও হুমকি দেয়। ঘটনার কয়েকদিন পর তাকে ফোন করে ধারণকৃত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে। ভয়ে ওই নারী এলাকা ছেড়ে মাইজদী বোনের বাসায় চলে যান। দেলওয়ার বাহিনীর লোকেরা প্রায়ই ফোন করে টাকা চাইতো। টাকা না দেয়ায় এক পর্যায়ে তারা ভিডিওটি ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। ভিডিওটি ভাইরাস হওয়ার পর প্রশাসনের টনক নড়ে। ওই নারীকে তার বোনের বাড়ি থেকে নিয়ে মামলা দায়ের করতে সহযোগিতা করে।

গতকাল রোববার বিকালে নির্যাতিতার বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মূল ফটকে তালা ঝুলছে। কথা হয় নারীর চাচা মো. নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এলাকার কিছু যুবক তার ভাতিজিকে ‘খারাপ’ আখ্যা দিয়ে ঘরে ঢুকে নির্যাতন করেছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে ঘটনার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না।

কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, বাড়িতে ওই নারীর চাচাদের সঙ্গে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় নির্যাতনের সময় তাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। হামলাকারীদের হুমকি-ধমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় পরিবারটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে অজ্ঞাতস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। বাড়ির কাছাকাছি খালপাড় নামকস্থানে ওই নারীর বাবার একটি চায়ের দোকান আছে। ঘটনার পর থেকে তিনি দোকান খোলেননি। 

আজ পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, মূলত ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাদের নজরে আসে। এরপর দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশ দুইজনকে তাত্ক্ষণিক গ্রেফতারও করেছে। এছাড়া র‌্যাব আরো দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।