কোচিং বাণিজ্য কেন হয় আমাদের দেশে?


একটা প্রবাদ আছে। ‘লেখা-পড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ে সে’। এর বাস্তবতা কী? আদৌ কি এর কোনো বাস্তবতা আছে আমাদের দেশে?
আমাদের দেশে লেখা-পড়ায় কিছু হয় না। বড় কিছু হতে হলে মামা-খালুর প্রয়োজন হয়। না হয় টাকা। তাও আবার বড় অঙ্কের। লেখা-পড়ার কোনো পরোয়া নেই, কোনোরকম হলেই হল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমনটা। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম।
লেখা-পড়া করে বড় কিছু হওয়া, গাড়ি-বাড়ির মালিক হওয়া প্রায় অসম্ভব। আপনি দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ভালো কোনো চাকরি পাবেন না। ভালো কিছু তালাশ করলেই লাগবে টাকা, না হয় মামা। টাকা-মামা না থাকায় ভালো যোগ্যতা নিয়েও অনেক বেকার ঘুরছে আমাদের দেশে।
কষ্ট করে ভালো একটা রেজাল্ট অর্জন করেছেন। এর পিছনে অনেক ব্যয়ও করতে হয়েছে। এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। কোনো উপায় না পেয়ে কিন্ডারগার্টেন বা কোনো প্রাইভেট স্কুল, কলেজের টিচার হয়েছেন।
বেতন তিন থেকে দশ হাজার টাকা। বা আরেকটু বেশি। এতেই কি চলবে আপনার? এই টাকা দিয়ে এখনকার যুগে একটা সংসারের জন্য কি হয়? কোচিং বাণিজ্য না করে উপায় কী?
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানটি খুব উন্নত মানের হলে বেতনও খুব ভালো হয়। শিক্ষকদের অন্য চিন্তা করতে হয় না। ছাত্রদেরও কোনো কোচিং-প্রাইভেট পড়তে হয় না। তবে কোচিং প্রাইভেটে যে খরচ হয় এসব প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখার খরচ তারচেয়ে অনেক বেশি।
সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হতে যোগ্যতার সাথে দিতে হয় বড় অঙ্কের টাকা। বেতন খুব বেশি একটা না। তা দিয়ে গাড়ি-বাড়ির স্বপ্ন দেখা যায় না।
অনেক স্বপ্ন চোখে-মুখে। গাড়ি হবে, বাড়ি হবে। বহু কষ্টে পড়া-লেখা করে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছি। পর্যাপ্ত যোগ্যতা থাকা সত্বেও চাকরির জন্য টাকা দিতে হয়েছে। এখন কোচিং বাণিজ্য না করে উপায় কী?
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এর মানে কী? আমি এখন আর খুঁজে পাই না এর বাস্তবতা।
যারা শিক্ষা দিচ্ছে, তাদের নৈতিকতাতেই যদি প্রশ্ন থাকে’ তাহলে এ শিক্ষা জাতির কতটা উপকারে আসবে?
খুবই কষ্টকর ব্যাপার! একই শিক্ষক, একই বিষয়, ক্লাসে ঠিকমতো পড়াচ্ছেন না। আবার বাইরে খুব ভালো করে বুঝাচ্ছেন। অথচ ক্লাসেরটা মৌলিক দায়িত্ব।
অনেক প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই কোচিং খোলা হয়েছে। আবার ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এই কোচিংয়েই পড়তে হবে। অন্যথায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
কোচিং বাণিজ্য বন্ধে উপরের মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। অনেক এলাকাতে মানব বন্ধন, আন্দোলনও হচ্ছে। আমিও চাই এটা বন্ধ হোক। নিঃশেষ হোক চিরতরে।
শিক্ষাগ্রহণ করে শিক্ষিত হোক সমাজ। শিক্ষার মান হোক সবার ওপরে। শিক্ষা থেকে সমস্ত কলঙ্ক ধূলিসাৎ হোক। এর জন্য সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপের। শিক্ষকদের ব্যাপারটাও বিবেচনা করতে হবে। যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে শিক্ষকদের।