মধুপুর ও ধনবাড়ীতে ৪২ প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা

কাবিখা’র ৩২২ মে.টন গম ফেরত যাওয়ার পথে

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, রোববার, ২১ জুন ২০২০ | ৪৫২

টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী (কাবিখা)’র বরাদ্দ পাওয়া ৩২২ মেট্রিক টন গম ফেরত যাচ্ছে। ফলে প্রকল্প প্রণনয়ন থেকে শুরু করে শ্রমিক মজুরীর বিপরীতে বরাদ্ধ গম ছাড়ের অনুমতি মিললেও ঐ প্রকল্পের ওই গম এখন সরকারের ঘরে ফেরত যাওয়ার অপেক্ষায়। এতে করে এলাকাবাসী উন্নয়ন কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে একই নির্বাচনী এলাকা (টাঙ্গাইল-১) মধুপুর উপজেলার ১১ টি ও ধনবাড়ী উপজেলার ৭ টি মিলে মোট ১৮ টি ইউনিয়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৩২২ মে.টন গমের বিপরীতে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে মধুপুর উপজেলায় ২০১ মে.টন এবং ধনবাড়ী উপজেলায় ১২১ মে.টন গম বরাদ্দ পায়।

এ বরাদ্দের বিপরীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রস্তাবিত প্রকল্পের ফাইল চালাচালির পর পাশ হয়ে ছাড়ের অনুমতি মিলে। কিন্তু ৯ কেজি গমের দিন হাজিরায় শ্রমিক মিলছে না অজুহাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ফলে দুই উপজেলার ১৮ টি ইউনিয়নে ৪২টি উন্নয়ন প্রকল্প বছরের শেষ প্রান্তিকে এসে অবাস্তবায়িত থাকায় বরাদ্দ পাওয়া ৩২২ মেট্রিক টন গম তামাদি হতে যাচ্ছে।

মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাইদ তালুকদার দুলাল ও মির্জাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদার জানান, যেখানে দৈনিক শ্রমিক মজুরী ৫/৬‘শত টাকা সেখানে একই সময়ে ২‘শত টাকার ৯ কেজি গমের মজুরীতে শ্রমিক পাওয়া অসম্ভব। তাই জন গুরুত্বপূর্ণ হলেও প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক ও মহিষমারা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মোতালেব হোসেন জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বরাদ্দ ছাড় করে এলাকাতে পরিবহণ করে নেয়াসহ আনুসাঙ্গিক কোন ব্যয়ের খাত নেই। স্থানীয়ভাবে ম্যানেজ করে বরাদ্দের পুরোটা প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার করতে হয়। তারপরও গমের বাজার মূল্যের বিপরীতে মজুরী খুব কম হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজ্জামান মিন্টু জানান, প্রকল্পের বরাদ্দ ছাড় পাওয়ার আগেই জন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় একটি প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ করে ফেলা হয়েছে। অর্থ বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার আশা করেছেন তিনি।
বীরতারা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামও বরাদ্দ পাওয়ার আগেই একটি কাজ শেষ করার কথা জানান। এখন সমন্বয় করার অপেক্ষায় আছেন তিনি। তিনি আরও জানান, গমের বিপরীতে চাল বরাদ্দ নিয়েও সমন্বয়হীনতা আছে। এটি দূর করা দরকার। কাজ করার লোক আছে। কিন্তু বরাদ্দ এবং মজুরীর সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে।

ধনবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবীবুর রহমান সুমন জানান, উপজেলা পরিষদের ৫৭ মেট্রিক টন গম বরাদ্দের বিপরীতে ৭ টি ইউনিয়নের ৯ টি প্রকল্প এবং নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক বরাদ্দের ৬৪ মেট্রিক টন গমের বিপরীতে ৮ টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে বরাদ্দকৃত অবশিষ্ট মাল ফেরত যাবে।

মধুপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাজিব আল রানা জানান, মধুপুর উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে সংসদীয় নির্বাচনী এলাকা ও উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে ২৫টি প্রকল্প গত দুই মাস আগে অনুমোদন হয়। কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা ৯ কেজি গমের মজুরীতে শ্রমিক না পাওয়ায় বরাদ্দের ছাড়পত্র পাওয়া সত্ত্বেও গম ছাড়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। গম বিক্রি করে শ্রমিক মজুরী নগদ টাকায় দেয়ারও সুযোগ নেই। তাই উত্তোলন না হলে বরাদ্দ ফিরে যাবে।