নৈরাজ্যে লন্ডভন্ড এবারের ঈদযাত্রা

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:১৫ পিএম, শনিবার, ১০ আগস্ট ২০১৯ | ২০৩
এবার দুর্ভোগ কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না ঈদে ঘরমুখো মানুষদের। ঈদযাত্রার চতুর্থ দিন শনিবারও বাস, ট্রেন ও লঞ্চ সব খানেই ছিল যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র। ট্রেনের সূচি বিপর্যয়ে ঈদযাত্রা হয়ে উঠেছে ভোগান্তির আরেক নাম। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে কমলাপুর স্টেশনেই। কোনো কোনো ট্রেন ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের ১০-১২ ঘণ্টা পর। এই পুরোটা সময় যাত্রীদের বসে থাকতে হয়েছে প্ল্যাটফর্মে।
রেলের মতো উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসেও শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীদের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। শনিবার মহাসড়কটিতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। অন্যদিকেযাত্রীর তুলনায় লঞ্চের সংখ্যা কম ও ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের।

ঈদের ছুটি রোববার শুরু হলেও শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনেই ঢাকা ছেড়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। শুক্রবার ঢাকা থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পাশে লাইনচ্যুত হলে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ট্রেনের সূচি বিপর্যয় ডেকে এনেছে। তাই বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে যেসব ট্রেন যায়, তার সবগুলোই কম-বেশি বিলম্বিত হয়েছে।
 
রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ার কথা ছিল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায়। কিন্তু ছেড়েছে শনিবার সকাল ১০টায়। এই ট্রেনের যাত্রী কামাল হোসেন বলেন, সারারাত স্টেশনে ছিলাম, তারপরও বাড়ি যেতে পারছি এটাই আনন্দ। রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস শনিবার সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়ে গেছে বিকাল ৩টার পরে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস শনিবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে দুপুর ২টার পরে। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা ছিল; সেটি ছেড়েছে রাত ৯টার পর।

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী কামরুল ইসলাম নিউজ টাঙ্গাইলকে বলেন, সকাল ৯টায় ছাড়ার কথা। এখনও স্টেশনে বসে আছি। রাত ৯টার পরে নাকি ছাড়বে, কিন্তু ভরসা পাচ্ছি না। লালমনি এক্সপ্রেস কমলাপুর ছাড়ার কথা ছিল সকাল সোয়া ৯টায়, কর্তৃপক্ষ সেই ট্রেন ছাড়ার সময় নির্ধারণ করেছেন রাত সাড়ে ১০টায়।

কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আমিনুল হক বলেন, ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ, সে কারণে প্রতিটি স্টেশনে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশিক্ষণ ট্রেন দাঁড়াচ্ছে। ফলে বিলম্ব হচ্ছে। শুক্রবার সুন্দরবন এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কারণেও শনিবার ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে। তবে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে কোনো যাত্রী টিকেটের টাকা ফেরত চাইলে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জল হোসেন নিউজ টাঙ্গাইলকে বলেন, ১১ আগস্ট ট্রেনগুলোর ক্ষেত্রে এ সুযোগ দেওয়া হবে। কেউ চাইলে তাকে অগ্রিম টিকেটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। শিডিউল বিপর্যয় রোববার অনেকটা গুছিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে ঈদযাত্রায় উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের বাসেও শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে।
সময়মতো বাসগুলো ফিরে আসতে না পারায় ঢাকা থেকে সেগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাস কর্তৃপক্ষ।
 
শনিবার রাজধানীর গাবতলী ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে দেখা যায় কাউন্টারগুলোয় তিল ধারণের জায়গা নেই। কাউন্টারের সামনে ফুটপাথ আর সড়কে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ছিল অনেকটা বেশি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের অপেক্ষায় থেকে কষ্ট পেলেও আপনজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারার তীব্র আগ্রহে সব কষ্ট সয়ে যাচ্ছেন তারা।
 
বেলা সাড়ে ১১টায় কল্যাণপুরে গ্রামীণ পরিবহনের একটি বাস নাটোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ বাসের যাত্রী সাফায়েত হোসেন পরিবারের চার সদস্যকে নিয়ে নাটোর যাচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, শুক্রবার রাত পৌনে ১২টায় গাড়িটি ছাড়ার সময় নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ছেড়েছে প্রায় ১২ ঘণ্টা পর। ছোট দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বাস কাউন্টারে।