ঠাকুরগাঁওয়ে

পিতা মাতার বিচ্ছেদের বলি ১০ দিনের অবুঝ শিশু

ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৩৯ পিএম, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০১৭ | ৪২৮

গত দেড় বছর আগে ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও এলাকায় নুরুল হকের ছেলে আলমের সঙ্গে পাশের চাড়োল ইউনিয়নের কাঁচনা মুধুপুর এলাকার আলী মউদ্দিনের মেয়ে মরিয়মের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়।

বিয়ের পর আলম ও মরিয়মের সংসার জীবন ভালোই চলছিল। সুখকে স্থায়ী করতে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু হঠাৎ পারিবারিক মনোমালিন্যের কারণে সুখের সংসারে বিরোধ সৃষ্টি হতে শুরু করে। গর্ভের সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েন মরিয়ম।

এরই মাঝে মরিয়ম আলমের সঙ্গে সংসার করবে না জানিয়ে দিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। আলম মরিয়মের গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে বিচ্ছেদ না করার জন্য শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সন্তান জন্মলাভের আগেই মরিয়ম আলমের সঙ্গে বিচ্ছেদ করিয়ে নেন।

গত ১০ দিন আগে মরিয়মের গর্ভ থেকে জন্ম হয়েছে একটি কন্যা সন্তানের। মরিয়ম ওইদিনই নবজাতক সন্তানকে তালাক দেয়া স্বামী আলমের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এতে নবজাতক সন্তান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন আলম ও তার বাবা নুরুল হক। আলমের মা আগেই মারা যাওয়ায় নবজাতকের যতœ নিয়ে এখন ১০ দিন যাবত বিপাকে দিন পার করছেন আলম।

আলম জানান, সন্তানের বাবা হওয়া অনেক আনন্দের। কিন্তু নবজাতক শিশুকে তার মা আমার কাছে রেখে চলে গেছে। আমি ও আমার বাবা মরিয়মকে অনেক অনুরোধ করেছি যেন জন্মের পর শিশুটিকে একটু যতœ করে। আমি ভরণপোষণের সকল খরচ দিতে চেয়েছি কিন্তু মরিয়ম ও তার পরিবার রাজি হয়নি। শিশুটিকে কিভাবে যতœ করব সেটাও জানি না। দিনমজুরের কাজ করে কোনো রকমে সংসার চলে। গত ১০ দিন ধরে নবজাতক সন্তানের জন্য কাজেও যেতে পারিনি। কেউ যদি আমার এই নবজাতক সন্তানটির দায়িত্ব নেয় সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

আলম অনুরোধ করে বলেন, কোনো মা যদি আমার এই নবজাতক সন্তানটিকে নিতে চায় দরকার হলে লিখিতভাবে শর্ত ছাড়াই দিয়ে দিব। যেন মায়ের অযতেœ নবজাতক শিশুটির কিছু না হয়।

এদিকে নবজাতক শিশুটির মা মরিয়মের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আলমের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। বিচ্ছেদের আগে যেহেতু সন্তান গর্ভে ছিল তাই জন্মের পর আলমকে সন্তানটি দিয়ে এসেছি। মায়ের দুধ ও যতœ না পাওয়ায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে এই অনুভূতিটি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, শুনেছি সন্তান জন্মের পর আলমের স্ত্রী নবজাতকটিকে দিয়ে চলে গেছেন। কিন্তু শিশুটি ১০ দিন ধরে মায়ের দুধ পান না করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আলম দরিদ্র হওয়ায় নবজাতকটিকে কেউ যদি লালন-পালনের জন্য নিতে চায় সে সেটাতে রাজি হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে নানা আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।