মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:১৩ পিএম, সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ৬৯৩
রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযানের জেরে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। এর মাঝেই সোমবার আন্তর্জাতিক একটি মানবাধিকার সংস্থা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে ‘পরিকল্পিত জাতিগত নিধন’ অভিযান চালিয়ে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে দেশ ছাড়া করার অভিযোগ রয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে আলোচনার আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ আহ্বান জানাল।

বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারে সহিংসতার জেরে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঘিরে মানবিক জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী আসায় ত্রাণ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দাতা সংস্থাগুলোকে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় ৪ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে অধিকাংশই শিশু এবং নারী। সব ধরনের ত্রাণের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। মৌসুমি বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে ত্রিপলের নিচে ঠাঁই নিয়েছেন তারা।

সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যারা পালিয়েছে তাদের ফেরত নেয়া হবে না বলে রোববার ইঙ্গিত দিয়েছে মিয়ানমার। দেশটির সরকার বলছে, এই শরণার্থীদের সঙ্গে গত আগস্টে দেশটির পুলিশ পোস্ট ও সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে হামলাকারীদের যোগাযোগ রয়েছে।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে রোহিঙ্গারা; দীর্ঘসময় ধরে এ রোহিঙ্গাদের স্রোত অব্যাহত আছে বাংলাদেশের দিকে। মিয়ানমারে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে মনে করা হয় রোহিঙ্গা মুসলিমদের।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। ওইদিন রাখাইনে পুলিশের ৩০টি ও সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্পে হামলা চালায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা। এতে অন্তত ১২ পুলিশ নিহত হয়। এরপরই রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনী ও রাখাইনের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে এই অভিযান শুরু করে। রয়টার্স বলছে, মানবাধিকার পর্যবেক্ষক ও রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতেই সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগ অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা।

তবে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমার বলছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) বিদ্রোহীদের দমনে নিরাপত্তা বাহিনী ক্লিয়ারেন্স অপারেশন পরিচালনা করছে। গত বছরের অক্টোবরে এবং গত আগস্টে পুলিশের পোস্টে হামলার দায় স্বীকার করে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠন।

এদিকে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত পাঠাতে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেবেন তিনি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সীমান্তের কাছে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানাবেন।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ‘নিরাপদ ও স্বেচ্ছা’ প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা ও ‘চলমান নৃশংসতা’ বন্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

এক বিবৃতিতে এই মানবাধিকার সংস্থা বলছে, রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন অভিযানের অবসান করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উচিত বার্মা সেনাবাহিনীর ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

রোহিঙ্গাদের এই সঙ্কটকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি সহিংসতায় জড়িত মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

প্রায় অর্ধ-শতাব্দি মিয়ানমারের শাসন ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব নিষেধাজ্ঞার বেশিরভাগই প্রত্যাহার করা হয়। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, দেশটির জেনারেলরা গণতন্ত্রের আংশিক যাত্রার অনুমতি দিয়েছে।