সঙ্কটে মালদ্বীপ, মাশুল গুণছে দিশেহারা ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ১৭২


দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নিঃশব্দে পিছু হটা চলছে ভারতের। মালদ্বীপে সঙ্কট শুরু হওয়ার পর প্রকাশ্যে এসে পড়েছে ভারতের কূটনৈতিক জড়তা।এর ফলও দেখা যাচ্ছে হাতে-নাতে। সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতা ও জরুরি অবস্থা জারির পরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লা ইয়ামিন জানিয়েছেন, তিন ‘বন্ধু দেশ’- চীন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবে বিশেষ দূত পাঠাচ্ছেন তিনি। কিন্তু ভারতে পাঠাবেন না।

তবে এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রতিবেশী তিন দেশে বিশেষ দূত পাঠানো হলেও ভারতে নয় কেন? বছরখানেক আগেও ‘ভারতই প্রথম’ স্লোগান নিয়ে চলছিল মালদ্বীপ। ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভেতরে ভেতরে ক্ষয় ধরেছিল সম্পর্কে। যা সামাল দিতে তৎপরতার সঙ্গে হাল ধরতে পারেনি সাউথ ব্লক। নিঃশব্দে চীন এসে দখল নিয়েছে সেই পরিসর। সাবেক কূটনীতিক এবং রাজীব গান্ধীর সময় আলদ্বীপে নিযুক্ত ভারতীয় বিশেষ দূত রণেন সেন হতাশার সঙ্গে বলছেন, ‘এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। মালদ্বীপে আমাদের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সম্পদ বহু ছিল। সেগুলো ধীরে ধীরে হাতছাড়া হচ্ছে।

রণেনের মতে, কথা বেশি না বলে, অন্য দেশকে সচেতন না করে চুপচাপ কাজ করে যাওয়া উচিত ছিল ভারতের। পরিস্থিতি বদলের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের নীতিকে বদলানো উচিত ছিল। তার কথায়, ‘একেই রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেয়া বলে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা হয়নি।’ ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশ বলছে, চালু প্রকল্পগুলোও হাতছাড়া হয়েছে ব্যাখ্যাতীত ঢিলেমির কারণে।

২০১৬ সালে নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রতিরক্ষা চুক্তি করে মালদ্বীপের বন্দর উন্নয়ন, সামরিক প্রশিক্ষণ, সমুদ্র নিরাপত্তা সংক্রান্ত বহু ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথে হাঁটা শুরু করেছিল। কিন্তু তার পরের বছরেই আসরে নামে বেইজিং। চীন-মালদ্বীপ মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তির পরে পুরো আবহাওয়াই বদলে যায়।

দেশটির এক সাবেক কূটনৈতিক কর্মকর্তার মতে, চীন সম্পর্কে ‘কখনও নরম, কখনও গরম’ নীতি নিয়ে চলার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই ভারসাম্যের অভাব ঘটেছে। শুভেচ্ছা সফরের নামে যখন মালদ্বীপে রণতরী পাঠায় চীন, তখন জোরালো প্রতিবাদ করা উচিত ছিল নয়াদিল্লির। কারণ কৌশলগতভাবে মালদ্বীপের অবস্থান ভারতের পক্ষে খুবই স্পর্শকাতর। কিন্তু চীনা জুজু দেখে সেভাবে স্বর তোলেনি নয়াদিল্লি।

সেই সময়ে প্রত্যক্ষ দৌরাত্ম্যর পথে না গিয়ে উল্টা ইয়ামিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদকে গুরুত্ব দেয়া শুরু করে কেন্দ্র। তাকে ভারতে নিয়ে আসা হয়। ক্ষুব্ধ মালদ্বীপ সরকার এরপরে আরো ঝুঁকে পড়ে বেইজিংয়ের দিকে।

একের পর এক চীনা লগ্নি হতে থাকে। মালে থেকে হুলহুল পর্যন্ত ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ, হুলহুল মালে বিশাল আবাসন প্রকল্পও এ সময়ে গড়ে উঠতে থাকে চীনা বিনিয়োগে। অনেকেই তাই মনে করছেন, শুধু নীতি বদল নয়, নীতি ধরে রাখার কাজটাও অনেকাংশেই সফলভাবে করতে পারেনি সাউথ ব্লক। এমন আপৎকালীন সময়ে দিল্লি তাই এক অর্থে দিশেহারা। আনন্দবাজার।