তিন মাস পার হলেও গ্রেফতার হয়নি  আমান আলী হত্যার আসামী 

ধনবাড়ী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪ | ৩৩

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর মুশুদ্দিতে কৃষক আমান আলীকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ হওয়া মামলার তিন মাস পার হলেও কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি।

ওই মামলার অভিযোপত্র জমা দেয়নি ধনবাড়ী থানা পুলিশ বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্বজন ও এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।

আসামিপক্ষ প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকায় ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন আমান আলীর স্বজনরা। নিহত পরিবারের দাবী মামলার আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের।

নিহত আমান আলী উপজেলার মুশুদ্দি উত্তরপাড়া গ্রামের মৃত আয়েত আলীর ছেলে। প্রতিবেশীদের হামলায় আহত হয়ে ৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ১১ মার্চ রাতে আমান আলী মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকেই থানা পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা। আদালতে মামলার অভিযোপত্র জমা দিতে গড়িমসি ও পক্ষপতিত্ব করছে বলে অভিযোগ তুলেন তারা। 

শুক্রবার (২১জুন) নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আমান আলী মারা গেলে ওই রাতেই ধনবাড়ী থানায় ৪/৫ জনকে অজ্ঞাতসহ পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি করেন নিহতের চাচা মো. মনিরুজ্জামান।

মামলার আসামীরা হলেন মো. সবুজ খান, ফারুক খান, রঞ্জু মিয়া, সাইদুর রহমান ও মো. ফরিদ। আসামীরা মুশুদ্দি উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার বিবরণী, নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত আমান আলীর চাচা মনিরুজ্জামানের ছেলে মেহেদী হাসান এর সাথে সাইদুর রহমানের মেয়ে কলেজছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক। মেহেদীদের বাড়ীতে নিজ ইচ্ছায় চলে আসে সেই মেয়ে। 

পরে স্থানীয় মাতাব্বরদের মাধ্যমে তাকে সাইদুরের পরিবারে কাছে ফেরত দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৫ মার্চ বিকালে মেহেদীদের বাড়ির সামনে লাঠিসোটা ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে সাইদুর গংরা আমান আলী, সাগর মিয়া ও নাজিমদের উপর হামলা চালায়। হামলাতে আমান আলীসহ ৭ জন আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আমান আলীকে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে তার অবস্থার  বেগতিক দেখে চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানেও তার অবস্থা আশংষ্কাজনক হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

ঢাকায় সাত দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১১ মার্চ রাতে মারা যান তিন সন্তানের জনক আমান আলী। হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধনবাড়ী থানার এসআই আবু বক্কর সিদ্দিক গড়িমসি ও পক্ষপতিত্ব করছেন অভিযোগ বাদি মো. মনিরুজ্জামান ও নিহতের স্বজনসহ এলাকাবাসীর। তিনি বলেন, আসামিরা এলাকায় অবস্থান করলেও এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার করেনি ধনবাড়ী থানা পুলিশ। দ্রæত মামলা তুলে না নিলে আমার ছেলে মেহেদীকেও মেরে ফেলা হবে বলে সাইদুর গংরা নানাভাবে প্রকাশ্য হুমকি দিচ্ছে।

নিহত আমান আলীর স্ত্রী রেজিনা বেগম ও ছেলে মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, আমরা গরীব মানুষ; আমাদের পাশে দাঁড়ানো মত কেউই নেই। দ্রুত হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার সহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবী জানাই। 

ওই হত্যা মামলার চূড়ান্ত মেডিকেল পরিক্ষার প্রতিবেদন হাতে পেয়েছেন বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধনবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দ্রুত সময়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। 

বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান, সিনিয়র পুলিশ সুপার মধুপুর সার্কেল ফারহানা আফরোজ জেমি।