ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স

‘সরকারি হাসপাতাল দালালদের নিরাপদ ব্যবসাস্থল’

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২ | ১৩০

টাঙ্গাইলে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স হাসপাতালে আসা রোগীদের ক্লিনিকে নিতেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতিদিন দৌড়ঝাপ শুরু করেন ক্লিনিকের দালালরা। উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা এসব ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিতে দালাল নিয়োগ করেছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালালমুক্ত হাসপাতাল গড়তে হিমশিম খাচ্ছে।

এদিকে, হাসপাতালে নারীর চোরের উপদ্রুব বেড়েছে। বুধবার দুপুরের চোরচক্রের সংঘবদ্ধ তিনজন নারী চোরকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত নারীরা হলেন- জামালপুর জেলার নান্দিনার বাদীর চামড়া গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে নার্গিস (১৮), ইসলামপুর উপজেলার হারগিলা গ্রামের চেন্টুর স্ত্রী জেলেহা খাতুন (৩৬) এবং জেলেহার মেয়ে জেসমিন (১৩)।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালে আসা এক রোগী আউটডোরে টিকিট কেটে চিকিৎসক দেখিয়েছেন নাসরিন নামের এক রোগী। এতে চিকিৎসক ওই রোগীকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পরামর্শ দেন। রোগীটি বাইরে বেরুতেই দালালের খপ্পরে পড়েন তিনি। পরে একে একে কয়েকজন দালাল ওই রোগীকে তাদের ক্লিনিকে নিতে চেষ্টা করছে। কিন্তু রোগী কোন পরীক্ষা করাবে জানালে দালালরা ভিন্ন রোগীর খোঁজে স্থান ত্যাগ করে। এমন চিত্র পুরো হাসপাতাল জুড়ে দেখা গেছে।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারী, অস্ত্রপাচার, এক্সরে, ইসিজিসহ ক্লিনিক্যাল সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে হাসপাতালে আসা রোগীদের ক্লিনিকে নিতে দালালরা মিথ্যা ও প্রলোভন দেখায়। তাদের মতে, সরকারি হাসপাতাল মানেই ব্যবসার অন্যতম একমাত্র আশ্রয়স্থল। কেননা যতজন রোগী ক্লিনিকে নিয়ে দিতে পারবে ততটাই কমিশন পান দালালরা। এতে রোগীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে ক্লিনিকে চলে যায়। ফলে প্রতারণা ও বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এদিকে হাসপাতালে রোগী সেজে চুরি ঘটনা ঘটছে।

সংঘবদ্ধ নারী দলের সদস্যা হাসপাতালে আসা রোগীদের গলার চেইন, ভ্যানিটি ব্যাগ, মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। চুরির ঘটনায় বুধবার হাসপাতালে জামালপুর জেলার তিন নারী চোরকে আটক করে পুলিশ। এসময় কয়েকজন নারী চোর চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। এরআগে হাসপাতালে টিকা নিতে আসা লিপি আক্তার নামে এক মহিলার ফোন চুরি করে নারী চোর চক্রের সদস্যরা।  

হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে আসা রোগী ইশরাত জাহান জানান, চিকিৎসক দেখিয়ে চেম্বারের বাইরে আসতেই এক নারী এগিয়ে আসে। এসময় তিনি বলেন, হাসপাতালেতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। তাই আসুন বাইরে থেকে কম টাকায় পরীক্ষা করিয়ে দেই।

রোগীরা জানান, দালালরা হাসপাতালে যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকার কথা বলে ক্লিনিকে যেতে বলে। এতে বাড়তি টাকার পাশাপাশি নামসর্বস্ব পরীক্ষায় প্রতারণা হতে হচ্ছে।

 নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্লিনিকের এক নারী দালাল জানায়, হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকায় রোগী তেমন পাওয়া যায় না। একজন রোগী নিতে পারলে কিছু কমিশন পাওয়া যায়। এতে দুপুর পর্যন্ত কয়েকজন রোগী ক্লিনিকে নিতে পারলে তিন-চারশ টাকা পাওয়া যায়।

ভূঞাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মোবাইল চুরির ঘটনায় ওই তিন নারীকে আটক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মহিউদ্দীন সাংবাদিকদের জানান, রোগী সেজে দালালরা হাসপাতালে আসে রোগী ভাগিয়ে নিতে। হাসপাতাল দালালমুক্ত করতে প্রতিনিয়ত মনিটরিং করা হচ্ছে। হাসপাতালেই কম খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এরপরও দালালরা রোগী ক্লিনিকে নিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। এছাড়াও হাসপাতালে ঠান্ডা জনিত কারণে এবং করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণের ফলে রোগীর সংখ্যা বেশি হয়। এতে সংঘবদ্ধ চোরচক্র মানুষজনের জিনিসপত্র চুরি করার ঘটনা ঘটছে।