মাইকেল মধুসূদনের স্মৃতি বিজড়িত সেই কপোতাক্ষ নদ হুমকীর মুখে!

জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ
প্রকাশিত: ০৭:১৮ এএম, রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০১৯ | ৪৫৯

“সতত, হে নদ, তুমি পড় মোর মনে! সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে, বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ-দলে, কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে? মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত সেই কপোতাক্ষ নদ এখন হুমকীর মুখে।

নদটি ভরাট করতে পৌরসভার পচাঁ আবর্জনাময় বর্জ্য ফেলা হচ্ছে।

ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই এই অনৈতিক কাজটি করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নদের অনেকটা জায়গা ভরাট করে ফেলা হয়েছে। অব্যহত রয়েছে বর্জ্য ফেলা। প্রতিদিন বর্জ্য পরিবহন গাড়িতে ময়লা এই নদে ফেলা হচ্ছে। এতে নদী ভরাটের পাশাপাশি পানি ও এলাকার পরিবেশ দুষিত হচ্ছে।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এভাবে নদের জায়গা ভরাট করে সেখানে মাছ বাজার প্রতিষ্ঠা করবেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। কপোতাক্ষ নদে ময়লা ফেলা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ হলেও বন্ধ হচ্ছে না। অবশ্য কর্তৃপক্ষ বলছেন, ময়লা ফেলার তাদের নিদৃষ্ট জায়গা না থাকায় এই স্থানে ফেলা হচ্ছে।

যশোর জেলার উপর দিয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদটির কিছু অংশ ঝিনাইদহের মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে। নদটি মহেশপুর উপজেলার পুরন্দপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খালিশপুর বাজার পার করে মহেশপুর শহরে প্রবেশ করেছে। মহেশপুর শহর পেরিয়ে বৈচিতলা হয়ে আবারো শহরের আরেক পাশ দিয়ে বয়ে আজমপুর হয়ে কোটচাঁদপুর উপজেলায় প্রবেশ করেছে। সেখান থেকে চৌগাছা হয়ে যশোরের কেশবপুরে মিলেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, মহেশপুর পৌরসভা ভবনের অদূরে কপোতাক্ষ নদের পাড়ে ফেলা হচ্ছে এই বর্জ্য। আগে এখানে চিত্ত বিনোদনের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বেঞ্চ তৈরী করেছিল। বেঞ্চে বসে মানুষ সময় কাটাতেন, আবার অনেকে মাছ ধরতেন।

স্থানিয় বাসিন্দা গোপাল হালদার জানান, তারা এই নদে মাছ ধরতো। নদের পাড়ে তাদের বাড়ি হওয়ায় পরিবারের সবাই এখানে গোসল করতেন। কিন্তু এক বছর ধরে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ময়লা ফেলা শুরু করেছে। ময়লার কারনে পানি দুষিত হয়ে হচ্ছে। পানি র্দূগন্ধযুক্ত হওয়ায় এখন আর কেউ গোসল করতে নামেন না। নদের মধ্যে ফেলা এই বর্জ্য থেকে এতাটা দুর্গন্ধ তৈরী হয় যে পার্শ্ববতী এলাকায় বসবাসকারীরাও ঠিকমতো বসবাস করতে পারছেন না। কুকুর-বিড়াল মারা গেলেও এই বর্জ্যরে সঙ্গে এখানে ফেলা হয়। যা এলাকায় প্রচন্ড রকমের র্দূগন্ধ ছড়ায়।

এ বিষয়ে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব মিজানুর রহমান জানান, মহেশপুর পৌরসভার বর্জ্য ফেলার নিজস্ব কোনো স্থান নেই। যে কারনে এই স্থানে ফেলা হচ্ছে।

মেয়র আব্দুর রশিদ খাঁন অবশ্য দাবি করেন, ময়লা ফেলা জায়গাটি পৌরসভার। নদী ওই স্থান দিয়ে ছিল না, তার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাই তারা পাড় বেঁধে সেখানে মাছ বাজার করার পরিকল্পনা নিয়েছেন।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্বতী শীল জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি পৌরসভার মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন। নদের পাড় ভরাট করার সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এ ধরণের কথা বলার পরও প্রতিদিন ময়লা আবর্জনা ফেলে দুগর্ন্ধের এক বিভিষিকাময় পরিবেশ তৈরী করেছে মহেশপুর পৌরসভা।