আজ টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১২:০৪ এএম, মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৪২৯

আজ ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল সূর্য সন্তানরা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে। উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। জয় বাংলা স্লোগানে মুখোরিত হয় পুরো জেলা। মানুষ পায় মুক্তির স্বাদ। যুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পার হয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পরপরই দেশ শত্রু মুক্ত করতে টাঙ্গাইলে গঠন করা হয় স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। এছাড়া কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে নিজস্ব একটি বাহিনী গঠিত হয়। চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ।

২৬ মার্চ গণমুক্তি পরিষদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল সদর থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৭ মার্চ বিন্দুবাসিনী সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় টাঙ্গাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ঐদিন রাতেই সার্কিট হাউজ আক্রম করে মুক্তিযোদ্ধারা। অতর্কিত এ আক্রমণে ২ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয় ও ১৫০ জন আত্মসমর্পণ করে। হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করলে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে আসে। তারা নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ ও সংগঠিত হতে থাকে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে একের পর এক যুদ্ধ। চারদিক থেকে আক্রমণে দিশেহারা হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ১০ ডিসেম্বর বিকেলে টাঙ্গাইল শহরের উত্তরে পৌলিতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রায় ২ হাজার সেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তারা ছুটতে থাকে ঢাকার দিকে।

১০ ডিসেম্বর রাতেই মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি টাঙ্গাইল সদর থানা দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১১ ডিসেম্বর ভোর থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে থাকেন এবং সারা শহর নিজেদের দখলে নিয়ে হানাদারদের ধরতে থাকেন। এভাবেই টাঙ্গাইল শহর সম্পূর্ণ হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তির স্বাদ পেয়ে উল্লসিত মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের ষাটের দশকের কবি ও মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব বলেন, ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মুক্ত না করলে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিজয় সম্ভব হতোনা। ১১ ডিসেম্বর সম্পূর্ণভাবে টাঙ্গাইলকে আমরা হানাদার মুক্ত করি। ওইদিন আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। আমার বাঙ্গালি হিসেবে জাতিকে নতুন একটি দেশ ও লাল সবুজের পতাকা উপহার দিতে পেরেছিলাম। এটাই আমার গর্ব।

এ দিনটির বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১০ ডিসেম্বর রাত ১২ টার পরে টাঙ্গাইল সদর থানায় কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে আমি প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। এদিনটিতে টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত করেছিলাম, এটা আমার সৌভাগ্য। ১০ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকবাহিনীরা আমাদের কাছে আত্মসমর্থন করেছে। আমরা তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছি।