অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল সেবা হেলমেট নয়, যাত্রীর জন্য ক্যাপ

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৪ এএম, মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর ২০১৮ | ৫৫৬

অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেলের রাইড সেবায় যুক্ত হয়ে চালকেরা পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হেলমেট। এসব হেলমেট ব্যবহার করছে যাত্রীরা। কিন্তু হেলমেটগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ব্যবহারকারীরা বলছেন, হেলমেটগুলো খুবই নিম্নমানের। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এগুলো প্রকৃতপক্ষে হেলমেট আকৃতির ক্যাপ। এগুলো পরা আর না পরা প্রায় সমান। দুর্ঘটনার সময় এগুলোতে মাথা ও মুখমণ্ডলের সুরক্ষা পাওয়া যাবে না।

দেশের ট্রাফিক আইন অনুযায়ী, মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীর হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে পুলিশ। সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে জ্বালানি বিক্রিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

যাত্রীদের জন্য হেলমেট নিশ্চিত করতে ঢাকা শহরে চলা অ্যাপভিত্তিক রাইড সেবায় যুক্ত অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বিনা মূল্যে হেলমেট সরবরাহ করছে। তবে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হেলমেট কিনতে হচ্ছে।

বংশাল ও বাংলামোটরে বেশ কয়েকটি হেলমেটের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হেলমেট হিসেবে যা সরবরাহ করছে, সেগুলো মূলত ক্যাপ। দেশেও ক্যাপ তৈরি হয়। এর দাম ২০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। দোকানিরা বলেছেন, ক্যাপের দামই সবচেয়ে কম। এগুলো খুব হালকা। এই ক্যাপ দিয়ে যথাযথ সুরক্ষা পাওয়া যাবে না। পূর্ব তেজতুরী বাজারের বাইকশপ বিডির এক বিক্রেতা বলেন, হেলমেটের সর্বনিম্ন দাম ৬০০ টাকা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, গাড়ির জন্য যেমন সিটবেল্ট, তেমনি মোটরসাইকেলের জন্য হেলমেট জীবন রক্ষাকারী উপাদান। এটি মানসম্মত না হলে হিতে বিপরীত হবে। তিনি বলেন, হেলমেটের মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। পাশাপাশি পুলিশ ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে ভূমিকা রাখতে হবে।

জানা গেছে, বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক মান পরীক্ষার তালিকায় থাকা ১৯৪টি পণ্যের মধ্যে ১২০ নম্বরে রয়েছে মোটরসাইকেল ও স্কুটারের চালক ও আরোহীর হেলমেট। হেলমেটের জন্য একটি নির্দিষ্ট মান অনুসরণ করতে হয়। ফলে বিএসটিআইয়ের মাধ্যমে মান নির্ধারণের পর প্রতিষ্ঠানটির মানচিহ্নসহ বাজারে বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে বাজারে বিএসটিআইয়ের মানচিহ্নসহ কোনো হেলমেট দেখা যায়নি।

রাইড শেয়ারিং সেবায় যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ করা হেলমেটের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) এস এম ইসাহাক আলী বলেন, দেশে কোনো হেলমেট তৈরি হয় না। এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বাধ্যতামূলকভাবে হেলমেটের মান পরীক্ষার জন্য পরবর্তী আমদানি নীতিতে হেলমেট অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তখন পরীক্ষা করে এসব হেলমেটের মান সম্পর্কে জানা যাবে।

বাজারে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকায় যেসব ক্যাপ বিক্রি হয়, সেগুলোই হেলমেট হিসেবে যাত্রীদের দেওয়া হয়।

গত শুক্রবার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে কথা হয় ‘পাঠাও’য়ের একজন চালকের সঙ্গে। তিনি যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জহুরুল ইসলাম নামের ওই চালকের কাছে নিজের জন্য মজবুত ও যাত্রীর জন্য পাঠাওয়ের লোগো–সংবলিত একটি হেলমেট দেখা গেছে। পাঠাওয়ের লোগো–সংবলিত হেলমেটটি তুলনামূলকভাবে অনেক হালকা। তিনি বলেন, হেলমেটটি তিনি বিনা মূল্যে পেয়েছেন।

উবার ও পাঠাওয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন আরিফ দেওয়ান। তিনি বলেন, দুই প্রতিষ্ঠানেরই হেলমেট অনেক হালকা। মাথায় ঠিকভাবে লাগতে চায় না। অন্য প্রতিষ্ঠানের হেলমেটের মানও প্রায় একই ধরনের বলে তিনি জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে পাঠাওয়ের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা সৈয়দা নাবিলা মাহবুব বলেন, প্রথমে ১০ হাজার রাইডারকে তাঁরা বিনা মূল্যে হেলমেট দিয়েছেন। এখন যাত্রীদের জন্য ৩৫০ টাকার একটি করে হেলমেট দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হেলমেটগুলো দেওয়া হয়েছে, যাতে যাত্রীরা অন্তত হেলমেট ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়। এগুলো দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক দামি হেলমেট ব্যবহার করলেও দুর্ঘটনায়  হতাহতের ঝুঁকি থাকে।’

এ ব্যাপারে উবারের বক্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির মনোনীত জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু দুই দিনেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সুত্রঃ প্রথোম আলো