নন্দীগ্রামে মরিচের বাম্পার ফলন


বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে চড়া মূল্য মরিচ বিক্রয় না হলেও লোকশান হবে না বলে মনে করছেন কৃষকরা । এবার ছাড়িয়ে গেছে মরিচ চাষের লক্ষ্য মাত্রা ।
এবার পৌরসভা সহ ৫টি ইউনিয়নে কৃষি বিভাগ থেকে ১০০ হেক্টর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ইতিমধ্যে ৩০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। গাছ ও হয়েছে অনেক ভালো। বর্ষায় মরিচ গাছ সুস্থ সবল রাখতে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে উপ সহকারী কৃষিকর্মকর্তারা। ভালো আবহাওয়া কৃষকদের কঠোর পরিশ্রম ও কৃষি অফিসের সঠিক দিক নির্দেশনায় মরিচের এমন বাম্পার ফলন বলে মন্তব্য করছেন অনেকে। নন্দীগ্রামের চাষীরা ধীরে ধীরে ধানের চাইতে মরিচ চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। সেই ফিরে আসছে নন্দীগ্রামের হারিয়ে যাওয়া মরিচ।
সরেজমিনে গিয়ে কয়েকজন মরিচ চাষীর সাথে কথা হয়। তার মধ্যে উপজেলার ৫নং ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বাদালাশন গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মরিচ চাষী জামিল হোসেন তিনি মরিচ চাষ করে নিজের লক্ষ্য পুরনের স্বপ্ন দেখছেন। একসময় তার জীবনের অনেক কিছুই ছিল অবাস্তব। তবে এবার মরিচ চাষ করে স্বপ্ন পুরন করতে চলেছেন তিনি।
তিনি জানান, তার নিজস্ব ১০ বিঘা জমিতে বিজলী প্লাস উচ্চ ফলনশীন জাতের মরিচ চাষ করেছেন । মরিচ চাষের নিয়ম সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আষাড় মাসের প্রথম সপ্তাহে মরিচ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করি। জমি প্রস্তুত করার সময় ব্যবহার করি ইউরিয়া সার, টিএসপি, পটাশ , জিপসাম ও জৈবসার নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করি। এরপর মরিচের চারাগুলো ধীরে-ধীরে জমির ভিতরে সারিবদ্ধভাবে রোপন করি। মরিচের গাছগুলো বেড়ে উঠার সাথে সাথে প্রতিটা গাছে বাঁশ দিয়ে বেধে দেই।
এতে আমার জমি তৈরী, সার, চারা কেনা ও কৃষান খরচ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। বর্তমানে পুরোদমে মরিচ উঠা শুরু করেছে তার ক্ষেত থেকে। লাভ ভালোই হবে বলে মনে করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি নিজ হাতে ও কৃষানের সহায়তায় নিয়মিত মরিচ গাছের পরিচর্যা পোকামাকড় দমন কীটনাশক প্রয়োগ করছেন তিনি । তার মরিচ ক্ষেতে গেলে চোখ জুড়িয়ে যায় চারদিকে শুধু সবুজের সমারোহ। বর্তমানে বাজারে মরিচের দাম প্রতি মন দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা । মরিচের বাজার যদি এভাবে থাকে তাহলে তার ১০ বিঘা জমিতে কয়েক লক্ষ টাকার মরিচ বিক্রয় হবে । এতে করে আড়াই লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে কয়েক লক্ষ টাকার মরিচ বিক্রয় হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন মরিচ চাষী জামিল হোসেন।
জামিল ছাড়াও ধুন্দার গ্রামের মামুন হোসেন, রিধইল গ্রামের মান্নান, জয়নাল আবেদিন, লুতফর রহমান, কাথম গ্রামের ইলিয়াস আলী সহ অনেক কৃষক মরিচ চাষ করেছেন। আবার অনেক কৃষক তাদের ভিটায় মরিচ চাষ করেছেন। এতে করে নন্দীগ্রামে ফিরতে শুরু করেছে মরিচের সোনালী দিন। কয়েকজন মরিচ চাষী জনায়, ধান চাষের চেয়ে মরিচ চাষ করা অনেক ভালো পরিশ্রম কম, লাভ ও বেশি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহা. মশিদুল হক জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের তৎপরতায় হারানো মরিচ আবার ফিরে এসেছে। মরিচ চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। এছাড়াও উপজেলার মরিচ ক্ষেত গুলোতে যেনো কোনরকম সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে জন্য নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও কৃষকদের এ আগ্রহ অব্যাহত থাকবে বলে তিনি মনে করেন।