পুলিশের এএসঅাই মাদক দিয়ে ফাঁসানোর সময় জনতার হাতে আটক

খালিদ হাসান,বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:৩৫ পিএম, শনিবার, ২১ জুলাই ২০১৮ | ৫৪২

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রামের সাধারন মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে হয়রানী ও টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে বগুড়া সদর থানার এএসআই কামরুলসহ তার সোর্স নাইমকে আটক করে গণধোলাই দিয়েছে জনতা।

শুক্রবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় বগুড়া সদরের এরুলিয়া ইউনিয়নের ঘোলাগাড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর  পেয়ে রাত ১০টায় অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।

এঘটনায় রাতেই এএসআই কামরুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয় এবং সোর্স নাইমকে পুলিশ হেফাজতে আটক রাখা হয়েছে।

শনিবার (২১ জুলাই) বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এএসআই কামরুলের বক্তব্য ছিল, তিনি আসামী ধরতে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি পুলিশের পোষাক ছাড়া গিয়েছেন, পরিচয়পত্রও নিয়ে যাননি। থানার কাউকে না জানিয়ে ওই গ্রামে গিয়েছেন। সিসিও নেননি। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বাহিরে যাওয়ার অভিযোগে এএসআই কামরুলকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, শনিবার সরেজমিনে ঘোলাগাড়ি এলাকায় গেলে গ্রামবাসী জানায়, গত ৪ দিন আগে থেকে বিকেলে দুই জন মটর সাইকেল যোগে এলাকায় আসেন। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে মটর সাইকেল আটক করে, আবার কাউকে ইয়াবা দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় শুরু করে।

স্থানীয়রা অারও জানান, বুধবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যার পর স্থানীয় একটি হোটেল থেকে ঘোলাগাড়ি গ্রামের আইনুরসহ ৫ জনকে আটক করে একটি ফাঁকা মাঠে নিয়ে যান এএসআই কামরুল। এরপর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১ হাজার করে মোট ৫ হাজার টাকা নেয়া হয়।

ওমর ফারুক নামের একজন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি তাঁর ছোট বোনকে মটরসাইকেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় রাস্তায় তাদেরকে আটক করে ভাই বোন সম্পর্ক কিনা জানতে চান এএসআই কামরুল। সর্ম্পক নিশ্চিত হওয়ার পর ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার ভয় দেখিয়ে ৫ হাজার টাকা আদায় করে।

মুদি দোকানী রফিকুল জানান, তার দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে টাকা চাইলে দোকানে থাকা মেয়াদ উত্তীর্ন পাউরুটি থাকায় ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করে। তালেব মহুরীর মটর সাইকেল আটক করে নেয়া হয় ২৬০০ টাকা। কম্পিউটারের দোকানদার এখলাসের দোকানে আইপিএল এর জুয়া খেলা হয় মর্মে অভিযোগ আছে বলে ৪ হাজার টাকা নেয়।

দর্জ্জি দোকানী লুৎফরের বিরুদ্ধে গাজা সেবনের অভিযোগ আছে মর্মে আটক বেদম মারপিট করে আদায় করা হয় ৫ হাজার টাকা। শুক্রবার বিকেলে ওই দুইজন আবারো এলাকায় গেলে গ্রামের লোকজন ডিবি অফিসে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয় যে ডিবি পুলিশের কোন সদস্য ঘোলাগাড়ি গ্রামে যায়নি। এসময় গ্রামের লোকজন তাদের নাম জানতে চাইলে তারা নিজেদের নাম হাসান ও মিজান বলে জানায়।

পরে ডিবি অফিসে আবারো যোগাযোগ করে গ্রামের লোকজন জানতে পারে হাসান ও মিজান নামে ডিবিতে কেউ নাই। পরে তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চায় গ্রামের লোকজন। পরিচয় পত্র দেখাতে না পারলে শুরু হয় গণধোলাই।

এদিকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায়ের খবর পেয়ে ডিবির এসআই নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে দুইজনকে স্থানীয় স্কুল ঘরে নিয়ে আটকে রাখা হয়।

রাত ৮টার দিকে সদর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করতে গেলে স্কুল মাঠে হাজার-হাজার মানুষ সমবেত হয় এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত এবং গত কয়েকদিনে হাতিয়ে নেয়া টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করে দুইজনকে নিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার দাবী জানায়।

এসময় বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: কামরুজ্জামান জনগনের উদ্দেশ্যে বলেন, যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের তালিকা তৈরী করে থানায় জমা দেন, টাকা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পরে এলাকাবাসীর পক্ষে অাবু তালেব মুহুরী তালিকা তৈরী করেন।

এ ব্যাপারে অাবু তালেব মুহুরী জানান, এপর্যন্ত ২২ জনের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। যাদের কাছ থেকে গত কয়েকদিনে প্রায় ৮০ হাজার টাকা আদায় করেছে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে।