রংপুর ও গাইবান্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় ঝড়ল ২২ প্রাণ

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৩০ এএম, শনিবার, ২৩ জুন ২০১৮ | ৪৫৭

রংপুর ও গাইবান্ধায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় কমপক্ষে ৩৬ জন আহত হয়েছেন।

রংপুর: রংপুরে বালুবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় বিআরটিসি বাসের ৬ যাত্রী নিহত হয়েছের। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৬ জন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার গভীর রাতে জেলার সদর উপজেলার পাগলাপীর সলেয়াশাহ্ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে বিআরটিসি’র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা স্পেশাল বাস (ঢাকা মেট্রো-ব ১১-৫১৯৩) দিনাজপুর থেকে রাত সাড়ে ১০ টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসটি নীলফামারীর সৈয়দপুর এলাকায় আসলে চাকা পাংচার হয়ে যায়।

শনিবার মধ্যরাতে রংপুরের সদর উপজেলার পাগলাপীর সলেয়াশাহ্ এলাকায় বাসটি রাস্তার ধারে থামিয়ে চাকা মেরামত করছিল হেলপার। এ সময় পেছন থেকে বালুবোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট ১৮-১৯০৪) বাসটিকে সজোরে ধাক্কা দিলে বাসে থাকা দুই নারীসহ ৬ জন যাত্রী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন ৬ জন। তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পেছনের কোন সিগন্যাল লাইট জ্বলে না থাকার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানান যাত্রীরা। নিহতদের মধ্যে দিনাজপুরের উপ-শহরের গামেন্টস কর্মী নিশাত (২০) ও সাজ্জাদের (১৯) পরিচয় পাওয়া গেছে।

বাসে থাকা যাত্রী দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মুন্নী (৩৫) জানান, সৈয়দপুরে বাসের চাকা পাংচার হয়ে গিয়েছিল। তাই বাস অনেক আস্তে আস্তে চলছিল। সলেয়াশাহ্ এলাকায় রাস্তার ধারে বাসটি থামিয়ে মেরামত করা হচ্ছিল। অনেক যাত্রী বাসের মধ্যে ছিল। আমিসহ অনেক যাত্রী রাস্তার পাশে নেমে হাঁটাহাঁটি করছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই হঠাৎ একটি ট্রাক এসে বাসটিকে ধাক্কা দেয়। বাসের পেছনের দিকে কোন সিগন্যাল লাইট জ্বলে না থাকার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। আমি কাছে গিয়ে খালি লাশ দেখতে পাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

বাসের আরেক যাত্রী শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, আমরা ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছিলাম। পথে বাসটি নষ্ট হয়ে যায়। আমি বাসের দোতলায় ছিলাম। হঠাৎ বাসে সজোরে কি যেন একটা ধাক্কা দেয়। আমি সিটকে শক্ত করে ধরে নিজেকে সামলে নিয়েছি। বাসটি রাস্তার ধার হতে খাদের দিকে পড়ে যেতে থাকলে বাসের জানালা দিয়ে বাহিরে চলে আসি। বের হয়ে দেখি কয়েকটি লাশ পড়ে আছে।

তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল্লাহ্ হিল বাকী জানান, বাসের যাত্রী বেশিরভাগই গার্মেন্টস কর্মী। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে দুজনের লাশ শনাক্ত করা গেলেও চাপা পড়ার কারণে অন্য নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস মিলে নিহতদের লাশ উদ্ধার করেছি।

গাইবান্ধা: ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের গাছে ধাক্কা খেয়ে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন।

শনিবার ভোরে উপজেলার মহেশপুর এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ জানায়, ভোর ৫টার দিকে পলাশবাড়ীর মহেশপুর এলাকায় ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী আলম এন্টারপ্রাইজ নামে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের গাছে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৯ জন, হাসপাতালে নেওয়ার পথে ৬ জন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে পলাশবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পলাশবাড়ি থানার ওসি মাহমুদুল আলম দুর্ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ আব্দুল হামিদ জানান, দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।