মাদক ও চোরাচালান আটকে নেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি-মারপিটের অভিযোগ

শুভ্র মজুমদার, কালিহাতী (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০২:৩৭ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল ২০১৮ | ৫৫৪

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মহাসড়কে প্রকাশ্যে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন ট্রাক-সিএনজি চালিত অটোরিক্সার মালিক-চালকরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কিংবা কাগজপত্র দেখার নামে তারা নিয়মিত চাঁদা নিলেও করার কিছুই নেই।

পরিবহনের চালক-হেলপারদের বেধরক মারপিট করা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। উত্তরবেঙ্গর প্রবেশদ্বার এলেঙ্গা দিয়ে যানবাহেন মাদক ও চোরাচালান হলেও আটকে নেই উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য। ফলে রাষ্ট্রের হচ্ছে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি ও সামাজিক অবক্ষয়। তবে এ সব কিছুই অস্বীকার করেছেন হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম।

উত্তরবঙ্গসহ ২৩ জেলার প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় স্থাপন করা হয় মধুপুর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি। মহাসড়কে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা রোধ এবং মাদক চোরাচালান আটক এই হাইওয়ে পুলিশের প্রধান কাজ।

এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের উত্তরপাশ থেকে করটিয়া বাইপাস পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার এবং ময়মনসিংহ লিংকরোড থেকে কালিহাতীর দিকে ২০ কিলোমিটার মহাসড়ক তাদের কার্যপথ। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রীবাহী এবং মালবাহী যানবাহন এই সড়কে চলাচল করে।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের বিরুদ্ধে যানবাহন থেকে দিনে-রাতে সমানতালে চাঁদাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পর্যন্ত পান না যাহবাহনের মালিক চালকরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে সন্ধ্যার পর থেকে টহলের নামে তাদের চাঁদাবাজি ভয়াবহ আকার রুপ নেয়। দূরের মালবাহী ট্রাক এবং ছোটছোট পিকআপের চালকদের টাকা না দিলে মুক্তি নেই।

মহাসড়কের তিনচাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও ফাঁড়ির পুলিশ নিয়মিত টাকা নিয়ে দেখেও না দেখার ভান করে। এমনকি সিএনজি চালিত অটোরিক্সাগুলো গ্যাস ভরার জন্যে পাম্পে যাবার সময় মহাসড়কে উঠলে তাদের নিকট থেকে নেয়া হচ্ছে টাকা।
ভুক্তভোগীরা জানান ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতীর উপজেলার এলেঙ্গা রিসোর্টের উত্তরপাশে, পৌলী বাসস্ট্যান্ডর পূর্বপাশে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর এবং ঘারিন্দাসহ কয়েকটি পয়েন্টে তারা এই চাঁদাবাজি করে থাকেন।

এদিকে কাগজপত্র বিহীন অটোসহ যানগুলো ধরে ফাঁড়িতে এনে মামলা না দিয়ে মোটা অংকের টাকা নেয়া রুটিনে পরিণত হয়েছে।জহুরুল হক নামের এক অটোরিক্সা চালক বলেন আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় হাইওয়ে পুলিশ মামলা দেয়ার ভয় দেখিয়ে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে।

করিম মিয়া নামের আরেক চালক বলেন আমার গাড়ি ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে গেলে ছাড়িয়ে আনতে আমার ৫ হাজার টাকা লাগে। উজ্জ্বল ও বাবু মিয়ার অটো আটক করলে তারা একইভাবেই মোটা টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছেন।

চালক মামুন, মনছুর, লাভলু জানান গ্যাস নেয়ার জন্য মহাসড়কে উঠলে হাইওয়ে পুলিশ তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। এই ধরনের অভিযোগ অসংখ্য চালকের। এদিকে এলেঙ্গা ও আশেপাশের ছাড়া দূরের কোন যানবাহন পেলেই তাদের কাছ থেকে প্রচন্ড ভয়ভীতি দেখিয়ে নেয়া হয় মোটা চাঁদা।

মহাসড়কে তিনচাকার যানবাহন চলাচল নিষ্দ্ধি থাকলেও টোকেনের মাধ্যমে নেয়া চাঁদা নিয়ে দেয়া হচ্ছে চলাচলের অবৈধ অনুমতি। টাঙ্গাইল পুরাতন বাসস্ট্যাান্ড থেকে সখিপুর, বাসাইল, করটিয়া ও নলুয়ায় চলাচল করে সহস্রাধিক সিএনজি চালিত অটো।

জানা যায় এই অটোগুলো আশেকপুর বাইপাস থেকে ভাতকুড়া পর্যন্ত মহাসড়ক ব্যবহার করতে প্রতিমাসে ২০০ টাকা করে চাঁদা দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চালক বলেন ফেব্রুয়ারি মাসে তারা, মার্চ মাসে বাঘ এবং এপ্রিল মাসে দোয়েল পাখি মার্কা টোকেনের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশের নামে এই চাঁদা আদায় করা হয়।

এছাড়াও যানবাহনের চালক-হেলাপারদের সাথে চরম খারাপ আচরণ এবং মারপিট করা এই হাইওয়ে পুলিশের স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখানকার সার্জেন্ট আজিজুর রহমান কিছুদিন পূর্বে এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে উত্তরবঙ্গগামী এক বাস চালককে বেধরক পিটুনি দেন। এতে বাস চালক গুরুত্বর আহত হলে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

বিভিন্ন প্রকার মাদকসহ অবৈধ চোরাচালান এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিনিয়তই হয়ে থাকে। গত ২১ এপ্রিল শনিবার কালিহাতীতে মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মত বিনিময় সভায় এলেঙ্গা পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র নূর-এ-আলম সিদ্দিকী এলেঙ্গাকে মাদক আনা নেওয়ার অন্যতম পয়েন্ট উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়। মাদক ও চোরাচালান রোধ কিংবা ধরপাকড়ে উল্লেখযোগ্য কোন সাফল্য নেই এই হাইওয়ে পুলিশের। এই মহাসড়ক দিয়ে অবৈধভাবে জিরা আমদানী করে হাইওয়ে পুলিশের ফাঁড়ির অদূরে এলেঙ্গাতেই স্থাপন করা হয়েছিল ফ্যাক্টরী। মাদক পারাপারে হাইওয়ে পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি ইতোপূর্বে পত্রপত্রিকায়ও এসেছে।

একদিকে যেমন সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসহ যানবাহনের চালক-হেলপাররা এই হয়রানি ও মারধর থেকে মুক্তি চান। তেমনি মাদক ও চোরাচালান বন্ধে আরো কার্যকর ভূমিকা নিয়ে যুব সমাজকে রক্ষা করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।এসব বিষয়ে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি এবং চালক-হেলপারদের মারপিটের বিষয়টি অস্বীকার করেন।