চিকিৎসার নামে প্রতারনা, নাগরপুরে রোগির
অ্যাপেন্ডিসাইটিস নাই তবুও অপারেশন, যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে অসহায় নূরজাহান


ফেরিওয়ালা মোঃ রমজান আলী তার অসুস্থ স্ত্রী মোছাঃ নূরজাহানকে (৪০) একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে স্বজনদের জানান, নূরজাহান অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগে আক্রান্ত। জরুরী আপারেশন করতে হবে। স্বজনরা কালবিলম্ব না করে ওই সময় তাকে ভর্তি করে। ভর্তির পরপরই নূরজাহানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে অস্ত্রপচার করেন।
অপারেশন টেবিলে নূরজাহানকে রেখে দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা অস্ত্রপচারের পর চিকিৎসক তার স্বজনদের জানান তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস নেই। টিবি হয়েছে। এদিকে অপারেশনের পর যন্ত্রনায় ছটফট করলেও নূরজাহানকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছো না বলে স্বজনরা অভিযোগ করেন। এ ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ডা. আজহারুল ইসলাম হাসপাতালে এ ঘটনাটি ঘটে। ফেরিওয়ালা মোঃ রমজান আলীর বাড়ি ভূয়াপুর উপজেলার নিকরাইল গ্রামে। সে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে নাগরপুরে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছে।
জানা যায়, নাগরপুর-দৌলতপুর সড়কে ফালগুনী সিনেমা হলের পাশে ২০১৭ সালের ৭ জুলাই ডা. আজহারুল ইসলাম হাসপাতালটি কার্যক্রম শুরু করে। অনুমোদনহীন এ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নিরীহ রোগিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন ডা. আজহারুল ইসলাম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে নূরজাহান। কথা হয় এ প্রতিবেদকের সাথে। তিনি জানান, পেটে প্রচন্ড ব্যাথা নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসা নিতে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোঃ জসিমউদ্দিনের সাথে সাক্ষাত করেন।
সাক্ষাত শেষে ওই চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করান। নূরজাহানের স্বামী ফেরি করে কাপড় বিক্রেতা রমজান আলী জানান, অপারেশনের জন্য ছয় হাজার টাকা চুক্তির পর দুপুর ২ টার দিকে আপারেশন টেবিলে নেয়া হয় নূরজাহানকে। প্রায় আড়াই ঘন্টাব্যাপি অপারেশনের পর সাড়ে চারটার দিকে তাদের জানানো হয় নূরজাহানের অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়নি।
একইসাথে হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন নুরজাহানের স্বামী রমজান আলী। রমজান আলী কান্নাজড়িত কন্ঠে তার স্ত্রী নূরজাহানের সুচিকিৎসার দাবি করেন।
ডা. আজহারুল ইসলাম হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোঃ জসিম উদ্দিনের সাথে তার চেম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ল্যাবরেটরি পরীক্ষা নিরীক্ষায় অ্যাপেন্ডিসাইটিস দেখা গেছে কিন্তু অস্ত্রপচারের সময় তা পাওয়া যায়নি। এটা ভুল চিকিৎসা নয় বলেও তিনি দাবি করেন।
ওই হাসপাতালের ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. হুমায়ূন কবির জানান, ল্যাবরেটরি টেষ্টের পর রিপোর্ট তৈরির দায়িত্ব আমার আর রোগ সনাক্তের দায়িত্ব চিকিৎসকের।