বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর শাসকগন

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৮ | ৬২১

বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর নেতাদের মধ্যে এডলফ হিটলারের অবস্থান সবার শীর্ষে। অনেক মানুষ এখনো জীবিত আছে যারা তার নিষ্ঠুরতার সাক্ষী। তিনি ১১-১৪ মিলিয়ন মানুষ হত্যার জন্য দায়ী যার মধ্যে ৬ মিলিয়নই ছিল ইহুদি। তিনি ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফিউরার ছিলেন।

এডলফ হিটলার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হিটলার একজন সাধারণ সৈনিক হিসেবে কাজ করেন এবং যুদ্ধ শেষে জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টিতে যোগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। দলের মধ্যে তিনি নিজের আসন পাকাপোক্ত করতে থাকেন। ১৯২০ সালে এই দলের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা হয় নাৎসি পার্টি। সেই বছরই একটি ডানপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বার্লিনে সামরিক ক্যু করার চেষ্টা করে নাৎসিরা। কিন্তু এই ক্যু ব্যর্থ হয়।

ফলে হিটলারকে জেল খাটতে হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদিবিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্রবিরোধিতা ছড়াতে থাকেন জার্মানদের মধ্যে। এভাবেই একসময় জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন। ১৯২১ সালে তিনি এই নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব লাভ করেন। তার চিন্তাধারায় ছিল একটা নতুন ওয়ার্ল্ড অর্ডার যার নেতৃত্ব দেবে নাৎসি জার্মানরা। ১৯৩৩ সালে তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন। হিটলারের রাজ্য জয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লাখ লাখ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিকে মিত্র বাহিনী যখন বার্লিন শহর দখল করে নিচ্ছিল তখন পরাজয় নিশ্চিত জেনেই ৩০ এপ্রিল হিটলার নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর পর তার লোকেরা তারই নির্দেশ মোতাবেক লাশকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। এভাবেই শেষ হয় বিশ্বের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও আগ্রাসী এক শাসকের উপাখ্যান।

জোসেফ স্টালিন: জোসেফ স্টালিন একজন রুশ সমাজতন্ত্রী রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯২২ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সচিব ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে এই সময়ে স্টালিনের নেতৃত্বে প্রচলিত রাজনৈতিক মতবাদ ‘স্টালিনবাদ’ নামে পরিচিত। শুরুতে কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সচিব হিসেবে স্টালিনের ক্ষমতা সীমিত ছিল। ধীরে ধীরে স্টালিন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে নেন এবং পার্টির নেতা হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসনক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। তার শাসন আমলে অর্থনৈতিক উত্থান-পতনের দরুন লাখ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায়। কমিউনিস্ট এই নেতা ১৫ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। শুধু ১৯৩২ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত ৬ লাখ মানুষ মারা যায় সরকারি বাহিনীর অত্যাচারে।

পল পট: কমিউনিস্ট শাসক পল পট প্রায় ১৭ লাখ কিংবা তার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণ মানুষ হত্যা করে। যদিও এই সংখ্যাটা অন্যদের চেয়ে কম তবুও এই ১৭ লাখ মানুষ ছিল পুরো কম্বোডিয়ার জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। পল পট ছিলেন কম্বোডিয়ার সমাজতন্ত্রের জন্য আন্দোলনকারী খেমাররুজ বাহিনীর প্রধান। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল অর্থাৎ তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি খেমাররুজ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। ১৯৭৫ সালে সে কম্বোডিয়ার শাসক হয় এবং একনায়করূপে আবির্ভূত হয়। ক্ষমতায় এসেই এই কমিউনিস্ট শাসক সমাজতন্ত্র কায়েম করে।

ইদি আমিন দাদা: উগান্ডার কসাই বলে এক নামে পরিচিত ইদি আমিন ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ৮ বছর ধরে উগান্ডা শাসন করেন। প্রায় তিন লাখ মানুষ মারা যায় তার হাতে। তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। হিটলারের আদর্শে অণুপ্রাণিত এই শাসক একই সঙ্গে ছিলেন এন্টি হোয়াইট বা শেতাঙ্গবিরোধী বর্ণবাদী এবং এন্টি এশিয়ান। জাতিগত বিশুদ্ধতার নামেই প্রায় ষাট হাজার এশিয়ান হত্যা করে।