ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগ

বিচার দাবিতে স্বামী পরিত্যক্তা নারীর সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:১৫ পিএম, বুধবার, ২৮ মার্চ ২০১৮ | ৫৩১

বান্দরবন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্বামী পরিত্যক্তা শারমিন বেগম (২৮)।

সে নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া ইউনিয়নের রাথুরা গ্রামের পংকু মিয়ার একমাত্র মেয়ে। মঙ্গলবার টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পাঠকৃত লিখিত বক্তব্যে জানা যায়, এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী শারমিন বেগম (২৮)।

গত ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট তারিখে সংসার বিচ্ছেদের শিকার হন তিনি। স্বামী পরিত্যক্তা হওয়ার সুযোগ নিয়ে মুঠোফোনে নানাভাবে শারমিন বেগমকে বিয়ের প্রলোভন দেখাতে থাকেন ওই গ্রামের বাসিন্দা ইন্তাজ আলীর ছেলে ও বান্দরবন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার রবিউল ইসলাম (৩২)।

এরই ধারাবিকতায় চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে শারমিনের বাথরুমে যাওয়ার সুযোগে ঘরে প্রবেশ করেন রবিউল ও তার সহযোগি আমিনুর রহমান। এ সময় তার ঘরের আলমারী ভেঙ্গে প্রবাসী বাবার গচ্ছিত নগদ দশ লাখ টাকা ও প্রায় পাঁচ ভরি ওজনের বিভিন্ন ধরণের স্বর্ণালংকার লুট করেন তারা। শব্দ হচ্ছে দেখে ঘরে প্রবেশ করতেই রবিউল শারমিনের মুখ চেপে ধরেন ও আমিনুর মুখে কসটেপ লাগিয়ে জোড়পূর্বক অপহরণ করে তাদের যাতায়াতে ব্যবহৃত সিএনজিতে তুলে অচেনা স্থানে নিয়ে যান তারা।

৩-৪দিন ওই স্থানে রাখার পর আমিনুর পূনরায় শারমিনকে রবিউলের বাড়ীতে নিয়ে এসে আটকে রাখেন। রবিউল বাড়ীতে আটক রাখা অবস্থায় একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে। রবিউলের বাড়ীতে আটক রাখার বিষয়টি অবগত হয়ে শারমিনের মা থানায় সংবাদ দেয়। তবে থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তিনি বাদী হয়ে ৫ মার্চ টাঙ্গাইলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খ অঞ্চলে ১০০ ধারায় মামলা করেন। এ মামলা প্রত্যাহার ও শারমিনকে বিয়ে করবে এমন শর্তে শালিস এর আয়োজন করেন স্থানীয় ১১নং পাকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। আয়োজিত শালিসে রবিউল ইসলাম টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করার কথা স্বীকার করাসহ শারমিনকে বিয়ে করতে রাজি হন। এর ফলে শালিসের বিচারকগণ শারমিনকে রবিউলদের বাড়ীতে আশ্রয় দেন।

তবে শালিসের শর্ত উপেক্ষা করে ৭ মার্চ রবিউলের মা বাদী হয়ে শারমিনের বিরুদ্ধে নাগরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ শারমিনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। আদালত থেকে জামিন পেয়ে শারমিন ১৩ মার্চ টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলমান রয়েছে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও শাস্তি দাবী করেছেন ভুক্তভোগী ও স্বামী পরিত্যক্তা শারমিন বেগম।

অপহরণ ও ধর্ষণে অভিযুক্ত রবিউল ইসলামের ব্যবহৃত মুঠোফোন ০১৭১৫-৭৫৪১৭৫ নম্বরটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে নারী অপহরণ ও ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে অবসরপ্রাপ্ত আনসার সদস্য ও রবিউল ইসলামের বাবা ইমতিয়াজ আলী জানান, প্রতিবেশী ও দুই সন্তানের জননী শারমিন বিয়ের দাবীতে তাদের বাড়ীতে ওঠেন। আমার ছেলে রবিউল ইসলাম অবিবাহিত ও বান্দরবন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার হিসেবে কর্মরত। একজন অবিবাহিত ছেলেকে স্বামী পরিত্যক্তা এক নারীর সাথে কেন বিয়ে দেব, বিষয়টি সম্ভব নয় বলেই শারমিনকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে শালিসের বিচারক ও ১১ নং পাকুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান জানান, রবিউল ও শারমিনের মধ্য প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

এ কারণে বিয়ে ছাড়াই প্রায়ই শারমিন রবিউলদের বাসায় অবস্থান করতো। রবিউল বিয়ে ছাড়া কেন শারমিনকে বাসায় রাখেন বিষয়টি স্পষ্ট করতে ওই শালিসের আয়োজন করা হয়। সম্পর্কের বিষয়টি রবিউল স্বীকার করায় শারমিনকে বিয়ে করার শর্ত দিয়ে রবিউলদের বাসায় রাখার সিদ্ধান্ত দেয়া হয় শালিসে। তবে পরবর্তীতে রবিউলের পরিবার ওই শর্ত অমান্য করে শারমিনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠান বলেও জানান তিনি।