৫ বছর ধ‌রে প‌রে অা‌ছে ৯ হাজার টন সার

বগুড়া প্র‌তি‌নি‌ধি
প্রকাশিত: ১১:১২ এএম, সোমবার, ২৬ মার্চ ২০১৮ | ৪৭৭
বগুড়ায় পাঁচ বছরের অ‌ধিক সময় ধ‌রে খোলা আকাশের নিচে পরে আছে ৯ হাজার টন ইউরিয়া সার। অব্যবস্থাপনা, সময়মত বিতরণ না হওয়া, ইত্যা‌দি অনিয়মেরড় কারণে এ সারগুলো জমাট বেঁধে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ‘ফাষ্ট ইন ফাষ্ট আউট মেথড’ না মানায় খোলা আকাশের নিচে সারগুলো রাখায় রোদ-বৃষ্টিতে আশপাশের ফসলের জমি ও জলাশয়ে ছ‌ড়ি‌য়ে পর‌ছে প‌রিত্যক্ত সার গু‌লো।
 
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার বিসিআইসির বাফার গুদামে এ অবস্থা বিরাজমান। বেশ ক‌য়েকমাস গনমাধ্য‌মে এ নি‌য়ে লেখা‌লে‌খি হ‌লেও কার্যকর কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ কর‌ছেনা কর্তৃপক্ষ।দীর্ঘদিনেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে সারগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে উঠেছে।
 
জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের সার ব্যবহারের ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো বগুড়ার সান্তাহার বিসিআইসি বাফার গুদামটি। সার মজুদের নতুন নতুন গুদাম বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠায় এটি আর ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হয় না। তবে আপৎকালীন মজুত থাকে।
 
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার শহরের পার্শ্ববর্তী নওগাঁ জেলার আট উপজেলায় নিবন্ধিত ৯৩ জন ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের মাঝে এখান থেকেই ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হয়। বগুড়া সীমানায় হলেও সারগুলো সরবরাহ করা হয় নওগা জেলার কৃষকদের জন্য। সান্তাহার গুদামের ধারণক্ষমতা ১৬ হাজার টন।
 
বর্তমানে এ গুদামে মজুদ আছে ২৮ হাজার টন। গুদামে রাখার পর বাকিটা রাখা হয়েছে গুদামের বাহিরে। আর গুদামের বাহিরে রাখা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার মেট্রিক টনের বেশি। গুদামের বাহিরে রাখা ইউরিয়া সারগুলো পলিথিন ও ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
 
গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে খোলা আকাশের নিয়ে বিপুল পরিমান সার পড়ে থাকায় রোদ-বৃষ্ঠিতে নষ্ট সহ আশপাশের ফসলি জমি ও জলাশয়ে ছড়িয়ে যাওয়াতে ক্ষতি হচ্ছে কৃষক ও মাছ চাষীদের। পুরনো জমাট বাঁধা এসব ইউরিয়া সার বিক্রি করতে না পারায় সার গ্রহণে অনাগ্রহ প্রকাশ করে ২০১৭ সালের শেষের দিকে নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে ডিলাররা।
 
ডিলারদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গুদামের মজুদ পরিস্থিতি জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, বগুড়ার সান্তাহার গুদামে কাফকো থেকে ৭২৪.৬১, শাহজালাল থেকে ৭৪৮.১৬ ও আমদানিকৃত ৩০ হাজার ২২০.৬৪টন সার মজুদ আছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৯৪৫.০৫ টন সার ১৮ গুদামের বাইরে খোলা আকাশের নিচে পলেথিন ও ত্রিপল দিয়ে আবৃত করে রাখা হয়েছে। এসব সার রোদ-বৃষ্টিতে জমাট বেঁধে শীলাখন্ডে পরিনত হয়েছে।
 
বগুড়ার সান্তাহার বাফার গুদাম ইনর্চাজ আব্দুল মালেক জানান, সান্তাহার গুদামের ধারণক্ষমতা ১৬ হাজার টন। বর্তমানে মজুদ আছে ২৮ হাজার টন। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত থাকায় অধিকাংশ সারই বাইরে খামাল দিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এই গুদামে কোন অনিয়ম নেই। অতিরিক্ত সার রাখা রয়েছে।
 
একসময় এই গুদামটি ট্রানজিট গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেকারণে সারের চাহিদা থাকতো বেশি এবং মজুদও হতো বেশি। কিন্তু এখন বগুড়া ছাড়াও নাটোর, রাজশাহিতে দু’টি, জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলায় গুদাম হওয়ার কারণে আগেরমত আর ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার হয় না। সরকারিভাবে ১০০০ কেজি সারের দাম ১৪ হাজার টাকা।